পাতা:আধুনিক সাহিত্য-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কৃষ্ণচরিত্র
৭৫

বীর ব্যক্তিরা হয় অতিশয় ক্লেশ নাহয় অত্যুৎকৃষ্ট সুখ সম্ভোগ করিয়া থাকেন, আর ইন্দ্রিয়সুখাভিলাষী ব্যক্তিগণ মধ্যাবস্থাতেই সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু উহা দুঃখের আকর; রাজ্যলাভ বা বনবাস সুখের নিদান।”

 বঙ্কিমবাবু মহাভারত হইতে কৃষ্ণের যে উক্তি উদ্ধৃত করিয়াছেন তাহা সুগভীর ভাবগর্ভ উপদেশে পূর্ণ। কিন্তু ইহা হইতে ঐতিহাসিক কৃষ্ণের চরিত্রনির্ণয়ের বিশেষ সাহায্য পাওয়া যায় এমন আমরা বিশ্বাস করি না। ইহাতে মহাভারতকার কবির মানবচরিত্রজ্ঞতা এবং হৃদয়ের উচ্চতা প্রকাশ করে। উদ্যোগপর্বের নবতিতম অধ্যায়ে কৃষ্ণের এই উক্তি বর্ণিত আছে; ইহার প্রায় চল্লিশ অধ্যায় পরেই কুন্তীর মুখে বিদুলাসঞ্জয়সংবাদনামক একটি পুরাতন কাহিনী সন্নিবেশিত হইয়াছে, তাহাতে তেজস্বিনী বিদুলা তাহার যুদ্ধচেষ্টাবিমুখ পুত্র সঞ্জয়কে ক্ষত্রধর্মে উৎসাহিত করিবার জন্য যে কথাগুলি বলিয়াছেন কৃষ্ণের পূর্বোধৃত উক্তির সহিত তাহার কিছুমাত্র প্রভেদ নাই। বিদুলা বলিতেছেন, ‘এখনো পুরুষোচিত চিন্তাভার বহন করে। অল্পদ্বারা পরিতৃপ্ত রাখিয়া অপরিমেয় আত্মাকে অনর্থক, অবমানিত করিয়ো না।••• ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নিম্নগাসকল যেমন অল্প জলেই পরিপূর্ণ হয় এবং মূষিকের অঞ্জলি যেমন অল্প দ্রব্যেই পূর্ণ হইয়া উঠে সেইরূপ কাপুরুষেরাও অত্যল্পমাত্রে পরিতৃপ্ত হওয়ায় সহজেই সন্তুষ্ট হইতে থাকে।••• চিরকাল ধূমিত হওয়া অপেক্ষা মুহূর্তকাল জ্বলিত হওয়াও শতগুণে শ্রেষ্ঠ।••• ইহসংসারে প্রজ্ঞাবান্ পুরুষ অত্যল্প বস্তুকে অপ্রিয় বোধ করেন; অত্যল্প বস্তু যাহার প্রিয় হয়, তাহার সেই অল্প বস্তুই নিশ্চয় অনিষ্টকর হইয়া থাকে।••• যাহারা ফলের অনিত্যত্ব স্থির করিয়াও কর্মের অনুষ্ঠানে পরাঙ্মুখ না হয় তাহাদের অভীষ্ট সিদ্ধ হইতেও পারে, না হইতেও পারে; কিন্তু অনিশ্চিতবোধে যাহারা একেবারেই অনুষ্ঠানে বিরত হয় তাহারা আর কস্মিন্ কালেও কৃতকার্য হইতে পারে না।’

  ইহা হইতে এই দেখা যাইতেছে যে, কর্তব্যপরায়ণতা সম্বন্ধে