পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টম পরিচ্ছেদ।
১৩১

নেড়ে মার!” কেহ বলিল “জয় জয়! মহারাজ কি জয়!” কেহ গায়িল “হরে মুররে মধুকৈটভারে!” কেহ গায়িল “বন্দে মাতরং!”, কেহ বলে―ভাই এমন দিন কি হইবে, তুচ্ছ বাঙ্গালি হইয়া রণক্ষেত্রে এ শরীর পাত করিব? কেহ বলে ভাই এমন দিন কি হইবে, মসজিদ ভাঙ্গিয়া রাধামাধবের মন্দির গড়িব? কেহ বলে ভাই এমন দিন কি হইবে, আপনার ধন আপনি খাইব? দশ সহস্র নরকণ্ঠের কলকল রব, মধু্র বায়ুসন্তাড়িত বৃক্ষপত্ররাশির মর্ম্মর, সৈকতবাহিনী তরঙ্গিণীর মৃদু মৃদু তর তর রব, নীল আকাশে চন্দ্র তারা শ্বেত মেঘরাশি, শ্যামল ধরণীতলে হরিৎ কানন, স্বচ্ছ নদী, শ্বেত সৈকত, ফুল্ল কুসুমদাম। আর মধ্যে মধ্যে সেই সর্ব্বজনমনোরম “বন্দে মাতরং।” তখন সত্যানন্দ আসিয়া সেই সমবেত সন্তানমণ্ডলীর মধ্যে দাঁড়াইলেন। তখন সেই দশ সহস্র সন্তানমন্তক বৃক্ষবিচ্ছেদপতিত চন্দ্রকিরণে প্রভাসিত হইয়া শ্যামলতৃণভূমে প্রণত হইল। অতি উচ্চৈঃস্বরে অশ্রুপূর্ণলোচনে উভয় বাহু ঊর্দ্ধে উত্তোলন করিয়া সত্যানন্দ বলিলেন,

 “শঙ্খচক্র গদাপদ্মধারী, বনমালী, বৈকুণ্ঠনাথ, যিনি কেশিমথন মধুমুরনরকমর্দ্দন লোকপালন তিনি তোমাদের মঙ্গল করুন, তিনি তোমাদের বাহুতে বল দিন, মনে ভক্তি দিন, ধর্ম্মে মতি দিন, তোমরা একবার তাঁহার মহিমা গীত কর।” তখন সেই সহস্র কণ্ঠে উচ্চৈঃস্বরে গীত হইতে লাগিল।

“জয় জগদীশ হরে
প্রলয়পয়োধিজলে ধৃতবানসি বেদং
বিহিত বহিত্র চরিত্র মখেদং
কেশব ধৃত মীন শরীর
জয় জগদীশ হরে।”