পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবম পরিচ্ছেদ।
১৩৫

 সেই দশ সহস্র সন্তান―অশ্ব ও পদাতি, অতিবেগে জীবানন্দের অনুবর্ত্তী হইল। পদাতির স্কন্ধে বন্দুক, কটীতে তরবারি, হস্তে বল্লম। কানন হইতে নিষ্ক্রান্ত হইবামাত্র, সেই অজস্র গোলাবৃষ্টি পড়িয়া তাহাদিগকে ছিন্ন ভিন্ন করিতে লাগিল। বহুতর সন্তান বিনা যুদ্ধে প্রাণ ত্যাগ করিয় ভূমিশয়ী হইল। একজন জীবানন্দকে বলিল “জীবানন্দ, অনর্থক প্রাণিহত্যায় কাজ কি।”

 জীবানন্দ ফিরিয়া চাহিয়া দেখিল ভবানন্দ―জীবানন্দ উত্তর করিল “কি করিতে বল”

 ভব। বনের ভিতর থাকিয়া বৃক্ষের আশ্রয় হইতে আপনদিগের প্রাণ রক্ষা করি―তোপের মুখে, পরিষ্কার মাঠে, বিনা তোপে এ সন্তানসৈন্য এক দণ্ড টিকিবে না; কিন্তু ঝোপের ভিতর থাকিয়া অনেকক্ষণ যুদ্ধ করা যাইতে পারিবে।

 জীব। তুমি সত্য কথা বলিয়াছ, কিন্তু প্রভু আজ্ঞা করিয়াছেন তোপ কাড়িয়া লইতে হইবে, অতএব আমরা তোপ কাড়িয়া লইতে যাইব।

 ভব। কার সাধ্য তোপ কাড়ে। কিন্তু যদি যেতেই হবে, তবে তুমি নিরস্ত হও আমি যাইতেছি।

 জীব। তা হবে না―ভবানন্দ! আজ আমার মরিবার দিন।

 ভব। আজ আমার মরিবার দিন।

 জীব। আমার প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইবে।

 ভব। তুমি নিষ্পাপশরীর―তোমার প্রায়শ্চিত্ত নাই। আমার চিত্ত কলুষিত―আমাকেই মরিতে হইবে―তুমি থাক, আমি যাই!

 জীব। ভবানন্দ! তোমার কি পাপ তাহা আমি জানি না। কিন্তু তুমি থাকিলে সন্তানের কার্য্যোদ্ধার হইবে। আমি যাই।