যেখানে মহারাজ বীরভূমাধিপতি আসাদ-উল্ জমান বাহাদুর রাজসিংহাসনে সুখে আসীন, সেই খানেই দারুণ রাজ্যধ্বংসসূচক বার্ত্তা পৌঁছিল। তখন অতি ব্যস্তে চারিদিকে রাজপুরুষেরা ছুটিল, রাজার অবশিষ্ট সিপাহী সুসজ্জিত হইয়া নগররক্ষার্থে শ্রেণীবদ্ধ হইল। রাজনগরের গড়ের ঘাটে ঘাটে, প্রকোষ্ঠ সকলে রক্ষকবর্গ সশস্ত্রে অতি সাবধানে, দ্বাররক্ষায় নিযুক্ত হইল। রাজধানী মধ্যে সমস্ত লোক সমস্তরাত্রি জাগরণ করিয়া, কি হয় কি হয় চিন্তা করিতে লাগিল। হিন্দুরা বলিতে লাগিল “আসুক সন্ন্যাসীরা আসুক, মা দুর্গা করুন, হিন্দুর অদৃষ্টে সেই দিন হউক।” মুসলমানের বলিতে লাগিল “আল্লা আকবর! এতনা রোজের পর কোরাণসরিফ বেবাক কি ঝুঁটো হলো; মোরা যে পাঁচু ওয়াক্ত নমাজ করি, তা এই তেলককাটা হেঁদুর দল ফতে করতে নারলাম। দুনিয়া সব ফাঁকি।” এইরূপে কেহ ক্রন্দন, কেহ হাস্য করিয়া সকলেই ঘোরতর আগ্রহের সহিত রাত্রি কাটাইতে লাগিল।
এ সকল কথা কল্যাণীর কাণে গেল—আবালবৃদ্ধবনিতা কাহারও অবিদিত ছিল না। কল্যাণী মনে মনে বলিল “জয় জগদীশ্বর! আজ তোমার কার্য্য সিদ্ধ হইয়াছে। আজ আমি স্বামিসন্দর্শনে যাত্রা করিব। হে মধুসূদন! আজ আমার সহায় হইও।”
গভীর রাত্রে কল্যাণী শয্যা ত্যাগ করিয়া উঠিয়া, একা খিড়কীর দ্বার খুলিয়া এদিক ওদিক চাহিয়া, কাহাকে কোথাও না দেখিয়া, ধীরে ধীরে নিঃশব্দে, গৌরীদেবীর পুরী হইতে রাজপথে নিষ্ক্রান্ত হইল। মনে মনে ইষ্টদেবতা স্মরণ করিয়া বলিল, “দেখ ঠাকুর, আজ যেন পদচিহ্নে তাঁর সাক্ষাৎ পাই।”
কল্যাণী নগরের ঘাটিতে আসিয়া উপস্থিত। পাহারাওয়ালা বলিল “কে যায়?” কল্যাণী ভীতস্বরে বলিল “আমি