পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫২
আনন্দ মঠ।

স্ত্রীলোক।” পাহারাওয়ালা বলিল “যাবার হুকুম নাই।” কথা দফাদারের কাণে গেল। দফাদার বলিল “বাহিরে যাইবার নিষেধ নাই, ভিতরে আসিবার নিষেধ।” শুনিয়া পাহারাওয়ালা কল্যাণীকে বলিল “যাও মায়ি, যাবার মানা নাই, লেকেন আজ কা বাতমে বড় আফত, কেয়া জানে মায়ি তোমার কি হোবে, তুমি কি ডেকেতের হাতে গিরবে, কি খানায় পড়িয়া মরিয়া যাবে, সে তো হাম কিছু জানে না, আজকা বাত মায়ি, তুমি বাহার না যাবে।”

 কল্যাণী বলিল “বাবা আমি ভিখারিণী—আমার এক কড়া কপর্দ্দক নাই, আমায় ডাকাতে কিছু বলিবে না।”

 পাহারাওয়ালা বলিল “বয়স আছে মায়ি, বয়স আছে, দুনিয়া মে ওহি তো জেওরাত হ্যায়! বল্‌কে হামি ডেকেত হতে পারি।” কল্যাণী দেখিল বড় বিপদ, কিছু কথা না কহিয়া, ধীরে ধীরে ঘাটি এড়াইয়া চলিয়া গেল। পাহারাওয়ালা দেখিল মায়ি রসিকতাটা বুঝিল না, তখন মনের দুঃখে গাঁজায় দম মারিয়া ঝিঁঝিট খাম্বাজে সোরির টপ্পা ধরিল। কল্যাণী চলিয়া গেল।

 সে রাত্রে পথে দলে দলে পথিক, কেহ মার মার শব্দ করিতেছে, কেহ পালাও পালাও শব্দ করিতেছে, কেহ কান্দিতেছে, কেহ হাসিতেছে, যে যাহাকে দেখিতেছে, সে তাহাকে ধরিতে যাইতেছে। কল্যাণী অতিশয় কষ্টে পড়িলেন। পথ মনে নাই, কাহাকে জিজ্ঞাসা করিবার যো নাই, সকলে রণোন্মুখ কেবল লুকাইয়া লুকাইয়া অন্ধকারে পথ চলিতে হইতেছে। লুকাইয়া লুকাইয়া যাইতেও এক দল অতি উদ্ধত, উন্মত্ত বিদ্রোহীর হাতে তিনি পড়িয়া গেলেন। তাহারা ঘোর চীৎকার করিয়া তাহাকে ধরিতে আসিল। কল্যাণী তখন ঊর্দ্ধশ্বাসে পলায়ন করিয়া জঙ্গলমধ্যে প্রবেশ করিলেন।