পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/১৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রয়ােদশ পরিচ্ছেদ।
১৫৩

সেখানেও সঙ্গে সঙ্গে দুই একজন দস্যু তাঁহার পশ্চাতে ধাবিত হইল। একজন গিয়া তাঁহার অঞ্চল ধরিল, বলিল “তবে চাঁদ!” সেই সময়ে আর একজন অকস্মাৎ আসিয়া অত্যাচারকারী পুরুষকে এক ঘা লাঠি মারিল। সে আহত হইয়া পাছু হটিয়া গেল। এই ব্যক্তির সন্ন্যাসীর বেশ—কৃষ্ণাজিনে বক্ষ আবৃত বয়স অতি অল্প। সে কল্যাণীকে বলিল “তুমি ভয় করিও না, আমার সঙ্গে আইস—কোথায় যাইবে?”

 ক। পদচিহ্নে।

 আগন্তুক বিস্মিত ও চমকিত হইল, বলিল “সে কি, পদচিহ্নে?” এই বলিয়া আগন্তুক কল্যাণীর দুই স্কন্ধে হস্ত স্থাপন করিয়া মুখ পানে সেই অন্ধকারে অতি যত্নের সহিত নিরীক্ষণ করিতে লাগিল।

 কল্যাণী অকস্মাৎ পুরুষস্পর্শে রোমাঞ্চিত, ভীত, ক্ষুব্ধ, বিস্মিত অশ্রুবিপ্লুত হইল—এমন সাধ্য নাই যে পলায়ন করে, ভীতিবিহ্বলা হইয়া গিয়াছিল। আগন্তুকের নিরীক্ষণ শেষ হইলে সে বলিল “হরে মুরারে! চিনেছি যে, তুমি পোড়ার মুখী কল্যাণী!”

 কল্যাণী ভীত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল “আপনি কে?”

 আগন্তুক বলিল “আমি তোমার দাসানুদাস—হে সুন্দরি! আমার প্রতি প্রসন্ন হও।”

 কুল্যাণী অতি দ্রুতবেগে সেখান হইতে সরিয়া গিয়া, তর্জ্জন গর্জ্জন করিয়া বলিল “এই অপমান করিবার জন্যই কি আপনি আমাকে রক্ষা করিলেন? দেখিতেছি ব্রহ্মচারীর বেশ, ব্রহ্মচারীর কি এই ধর্ম্ম? আমি আজ নিঃসহায়, নহিলে তোমার মুখে আমি নাথি মারিতাম।”

 ব্রহ্মচারী বলিল, “অয়ি স্মিতবদনে! আমি বহুদিবসাবধি, তোমার ঐ বরবপুর স্পর্শ কামনা করিতেছি।” এই বলিয়া ব্রহ্ম-