পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/১৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৮
আনন্দ মঠ।

 ম। তাতে কি?

 নবী। আমাকে অবিশ্বাস করিতে পারেন—কল্যাণীকে অবিশ্বাস করেন কোন্ হিসাবে?

 এবার মহেন্দ্র বড় অপ্রতিভ হইলেন। বলিলেন,

 “কই কিসে অবিশ্বাস করিলাম?”

 নবী। নহিলে আমার পিছু পিছু অন্তঃপুরে আসিয়া উপস্থিত কেন?

 ম। কল্যাণীর সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল; তাই আসিয়াছি।

 ন। তবে এখন যান। কল্যাণীর সঙ্গে আমারও কিছু কথা আছে। আপনি সরিয়া যান, আমি আগে কথা কই। আপনার ঘর বাড়ী, আপনি সর্ব্বদা আসিতে পারেন, আমি কষ্টে একবার আসিয়াছি।

 মহেন্দ্র বোকা হইয়া রহিল। কিছুই বুঝিতে পারিতেছে না। এ সকল কথা ত অপরাধীর কথাবার্ত্তার মত নহে। কল্যাণীরও ভাব বিচিত্র। সেও ত অবিশ্বাসিনীর মত পলাইল না, ভীত হইল না, লজ্জিত নহে—কিছুই না বরং মৃদু মৃদু হাসিতেছে। আর কল্যাণী—যে সেই বৃক্ষতলে অনায়াসে বিষ ভোজন করিয়াছিল সে কি অপরাধিনী হইতে পারে? মহেন্দ্র এই সকল ভাবিতেছেন এমত সময়ে অভাগিনী শান্তি, মহেন্দ্রের দুরবস্থা দেখিয়া ঈষৎ হাসিয়া কল্যাণীর প্রতি এক বিলোল কটাক্ষ নিক্ষেপ করিল। সহসা তখন অন্ধকার ঘুচিল—মহেন্দ্র দেখিল, এ যে রমণীকটাক্ষ। সাহসে ভর করিয়া, যা থাকে কপালে বলিয়া, নবীনানন্দের দাড়ি ধরিয়া মহেন্দ্র এক টান দিল—কৃত্রিম দাড়ি গোঁপ খসিয়া আসিল। সেই সময়ে অবসর পাইয়া, কল্যাণী বাঘছালের গ্রন্থি খুলিয়া ফেলিল—বাঘছালও খসিয়া পড়িল! ধরা পড়িয়া শান্তি অবনতমুখী হইয়া রহিল।