শুভক্ষণে, জয়দেব গোস্বামীর তীর্থে, অজয়ের পবিত্র জলে প্রাণ বিসর্জ্জন করিয়া, প্রতিজ্ঞাভঙ্গ মহাপাপের প্রায়শ্চিত্ত করিবে, ইহাই তাহাদের অভিসন্ধি। কিন্তু পথে যাইতে যাইতে তাহারা শুনিল যে কেন্দুবিল্লে সমবেত সন্তানদিগের সঙ্গে রাজসৈন্যের মহাযুদ্ধ হইবে। তখন জীবানন্দ বলিল, “তবে যুদ্ধেই মরিব, শীঘ্র চল।”
তাহারা শীঘ্র শীঘ্র চলিল। পথ এক স্থানে একটা টিলার উপর দিয়া গিয়াছে। টিলায় উঠিয়া, বীরদম্পতী দেখিতে পাইল—যে নিম্নে কিছু দূরে ইংরেজশিবির। শান্তি বলিল, “মরার কথা এখন থাক্—বল ‘বন্দে মাতরং’।”
সপ্তদশ পরিচ্ছেদ।
তখন দুই জনে কানে কানে কি পরামর্শ করিল। পরামর্শ করিয়া জীবানন্দ এক বনে লুকাইল। শান্তি আর এক বনে প্রবেশ করিয়া এক অদ্ভূত রহস্যে প্রবৃত্ত হইল।
শান্তি মরিতে যাইতেছিল, কিন্তু মৃত্যুকালে স্ত্রীবেশ ধরিবে ইহা স্থির করিয়াছিল। তাহার এই পুরুষবেশ জুয়াচুরি, মহেন্দ্র বলিয়ছে। জুয়াচুরি করিতে করিতে মরা হইবে না। সুতরাং ঝাঁপি টেপারিটি সঙ্গে আনিয়াছিল। তাহাতে তাহার সজ্জা সকল থাকিত। এখন নবীনানন্দ ঝাঁপি টেপারি খুলিয়া বেশপবির্ত্তনে প্রবৃত্ত হইল।
চিকন রকম রসকলির উপর খয়েরের টিপ কাটিয়া তৎকালপ্রচলিত ফুর ফুরে কোঁকড়া কোঁকড়া কতকগুলো ঝাঁপটার গোছায় চাদমুখ খানি ঢাকিয়া, শান্তি একটী সারঙ্গ হস্তে বৈষ্ণবী বেশে, ইংরেজশিবিরে দর্শন দিল। দেখিয়া ভ্রমরকৃষ্ণশ্মশ্রুযুক্ত সিপাহীরা বড় মাতিয়া গেল। কেহ টপ্পা, কেহ গজল, কেহ শ্যামাবিষয়,