পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/১৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ।
১৬৭

 তখন ঠক্ ঠক্ খটা খট্‌ তাম্বুর খোঁটায় মুগুরের ঘা পড়িতে লাগিল। মেঘরচিত অমরাবতীর ন্যায় বস্ত্রনগরী অন্তর্হিতা হইল। মাল গাড়িতে বোঝাই হইল। মানুষ ঘোড়ায় অথবা আপনার পায়ে। হিন্দু মুসলমান মাদরাজী গোরা বন্দুক ঘাড়ে মস্‌ মস্ করিয়া চলিল। কামানের গাড়ি ঘড়োর ঘড়োর করিতে করিতে চলিল।

 এদিকে মহেন্দ্র সন্তানসেনা লইয়া ক্রমে কেন্দুবিল্লের পথে অগ্রসর। সেই দিন বৈকালে মহেন্দ্র ভাবিল, বেলা পড়িয়া আসিল। শিবির সংস্থাপন করা যাক।

 তখন শিবির সংস্থাপন উচিত বোধ হইল। বৈষ্ণবের তাঁবু নাই। গাছ তলায় গুণ চট বা কাঁথা পাতিয়া, শয়ন করে। একটু হরিচরণামৃত খাইয়া রাত্রি যাপন করে। ক্ষুধা যে টুকু বাকি থাকে, স্বপ্নে বৈষ্ণবী ঠাকুরাণীর অধরামৃত পান করিয়া পরিপূরণ করে। শিবিরোপযোগী নিকটে একটী স্থান ছিল। একটা বড় বাগান—আম কঁঠাল বাবলা তেঁতুল। মহেন্দ্র আজ্ঞা দিলেন “এই খানেই শিবির কর।” তারি পাশে একটা পাহাড় ছিল, উঠিতে বড় বন্ধুর, মহেন্দ্র একবার ভাবিলেন এ পাহাড়ের উপর শিবির করিলেও হয়। স্থান টা দেখিয়া আসিবেন মনে করিলেন।

 এই ভাবিয়া মহেন্দ্র অশ্বে আরোহণ করিয়া ধীরে ধীরে পর্ব্বতশিখরে উঠিতে আরম্ভ করিলেন। তিনি কিছু দূর উঠিলে পর এক যুবা যোদ্ধা বৈষ্ণবসেনামধ্যে প্রবিষ্ট হইয়া বলিল, “চল, পর্ব্বতে, চড়।” নিকটে যাহারা ছিল তাহারা বিস্মিত হইয়া বলিল “কেন?”

 যোদ্ধা এক শিলাখণ্ডের উপর উঠিয়া দাঁড়াইয়া বলিল, “চল এই