পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/১৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭8
আনন্দ মঠ।

বান্‌ পুরুষ এক মৃতদেহ বাহির করিলেন। শান্তি চিনিল সেই জীবানন্দের দেহ। সর্ব্বাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত, রুধিরে পরিপ্লুত। শান্তি, সামান্য স্ত্রীলোকের ন্যায় উচ্চৈঃস্বরে কাঁদিতে লাগিল।

 আবার, তিনি বলিলেন, “কাঁদিও না মা! জীবানন্দ কি মরিয়াছে? স্থির হইয়া উহার দেহ পরীক্ষা করিয়া দেখ। আগে নাড়ী দেখ।”

 শান্তি শবের নাড়ি টিপিয়া দেখিল, কিছু মাত্র গতি নাই। সেই পুরুষ বলিলেন, “বুকে হাত দিয়া দেখ।”

 যেখানে হৃৎপিণ্ড, শাস্তি সেইখানে হাত দিয়া দেখিল, কিছুমাত্র গতি নাই; সব শীতল।

 সেই পুরুষ আবার বলিলেন, “নাকের কাছে হাত দিয়া দেখ—কিছু মাত্র নিঃশ্বাস বহিতেছে কি?”

 শান্তি দেখিল, কিছু মাত্র না।

 সেই পুরুষ বলিলেন, “আবার দেখ, মুখের ভিতর আঙ্গুল দিয়া দেখ—কিছু মাত্র উষ্ণতা আছে কি না?” শান্তি আঙ্গুল দিয়া দেখিয়া বলিল, “বুঝিতে পারিতেছি না।” শান্তি আশামুগ্ধ হইয়াছিল।

 মহাপুরুষ, বামহস্তে জীবানন্দের দেহ স্পর্শ করিলেন। বলিলেন, “তুমি ভয়ে হতাশ হইয়াছ! তাই বুঝিতে পারিতেছ না—শরীরে কিছু তাপ এখনও আছে বোধ হইতেছে। আবার দেখ দেখি।”

 শান্তি তখন আবার নাড়ী দেখিল, কিছু গতি আছে। বিস্মিত হইয়া হৃৎপিণ্ডের উপর হাত রাখিল—একটু ধক্‌ ধক্‌ করিতেছে। নাকের আগে আঙ্গুল রাখিল—একটু নিশ্বাস বহিতেছে! মুখের ভিতর অল্প উষ্ণতা পাওয়া গেল। শাস্তি বিস্মিত হইয়া বলিল, “প্রাণ ছিল কি? না, আবার আসিয়াছে?”