বৈষ্ণব বলিল, “আমার নাম ধীরানন্দ গোস্বামী।”
এই বলিয়া ধীরানন্দ অগ্রে অগ্রে চলিলেন, মহেন্দ্র, কল্যাণী পশ্চাৎ পশ্চাৎ চলিলেন। ধীরানন্দ অতি দুর্গম পথ দিয়া তাঁহাদিগকে বাহির করিয়া দিয়া, একা বনমধ্যে পুনঃপ্রবেশ করিলেন।
আনন্দারণ্য হইতে তাহারা বাহিরে আসিলে কিছু দূরে সবৃক্ষ প্রান্তর আরম্ভ হইল। প্রান্তর এক দিকে রহিল, বনের ধারে ধারে রাজপথ। একস্থানে অরণ্যমধ্য দিয়া একটী ক্ষুদ্র নদী কলকল শব্দে বহিতেছে। জল অতি পরিষ্কার, নিবিড় মেঘের মত কালো। দুই পাশে শ্যামল শোভাময় নানাজাতীয় বৃক্ষ নদীকে ছায়া করিয়া আছে, নানা জাতীয় পক্ষী বৃক্ষে বসিয়া নানাবিধ রব করিতেছে। সেই রব—সেও মধুর—মধুর নদীর রবের সঙ্গে মিশিতেছে। তেমনি করিয়া বৃক্ষের ছায়া আর জলের বর্ণ মিশিয়াছে। কল্যাণীর মনও বুঝি সেই ছায়ার সঙ্গে মিশিল। কল্যাণী নদীতীরে এক বৃক্ষমূলে বসিলেন, স্বামীকে নিকটে বসিতে বলিলেন। স্বামী বসিলেন, কল্যাণী স্বামীর কোল হইতে কন্যাকে কোলে লইলেন। স্বামীর হাত হাতে লইয়া কিছুক্ষণ নীরবে বসিয়া রহিলেন। পরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমাকে আজি আমি বড় বিমর্ষ দেখিতেছি? বিপদ যাহা, তাহা হইতে উদ্ধার পাইয়াছি—এখন এত বিষাদ কেন?”
মহেন্দ্র দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন, “আমি আর আপনার নহি—আমি কি করিব বুঝিতে পারি না।”
ক। কেন?
মহে। তোমাকে হারাইলে পর আমার যাহা যাহা ঘটিয়াছিল শুন। এই বলিয়া যাহা যাহা ঘটিয়াছিল, মহেন্দ্র তাহা সবিস্তারে বলিল।