বাঁশীর শব্দের মত শব্দ হইল। সেই চতুর্ভুজ যেন আমাকে বলিলেন, ‘তুমি স্বামীকে ছাড়িয়া আমার কাছে এস। এই তোমাদের মা, তোমার স্বামী এঁর সেবা করিবে। তুমি স্বামীর কাছে থাকিলে এঁর সেবা হইবে না; তুমি চলিয়া আইস।’—আমি যেন কাঁদিয়া বলিলাম, ‘স্বামী ছাড়িয়া আসিব কি প্রকারে’। তখন আবার বাঁশীর শব্দে শব্দ হইল ‘আমি স্বামী, আমি মাতা, আমি পিতা, আমি পুত্র, আমি কন্যা, আমার কাছে এস।’ আমি কি বলিলাম মনে নাই। আমার ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল।” এই বলিয়া কল্যাণী নীরব হইয়া রহিলেন।
মহেন্দ্র বিস্মিত, স্তম্ভিত, ভীত হইয়া নীরবে রহিলেন। মাথার উপর দোয়েল ঝঙ্কার করিতে লাগিল। পাপিয়া স্বরে আকাশ প্লাবিত করিতে লাগিল। কোকিল দিঙ্মুণ্ডল প্রতিধ্বনিত করিতে লাগিল। “ভৃঙ্গরাজ” কলকণ্ঠে কানন কম্পিত করিতে লাগিল। পদতলে তটিনী মৃদু কল্লোল করিতেছিল। বায়ু বন্য পুষ্পের মৃদু গন্ধ আনিয়া দিতেছিল। কোথাও মধ্যে মধ্যে নদীজলে রৌদ্র ঝিকিমিকি করিতেছিল। কোথাও তালপত্র মৃদু পবনে মর্ম্মর শব্দ করিতেছিল। দূরে নীল পর্ব্বতশ্রেণী দেখা যাইতেছিল। দুই জনে অনেক্ষণ মুগ্ধ হইয়া নীরবে রহিলেন। অনেক্ষণ পরে কল্যাণী পুনরপি জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি ভাবিতেছ?”
মহে। কি করিব, তাহাই ভাবি—স্বপ্ন কেবল বিভীষিকামাত্র, আপনার মনে জন্মিয়া আপনি লয় পায়, জীবনের জলবিম্ব—চল গৃহে যাই।
ক। যেখানে দেবতা তোমাকে যাইতে বলেন, তুমি সেইখানে যাও—এই বলিয়া কল্যাণী কন্যাকে স্বামীর কোলে দিলেন।