পাতা:আনন্দমঠ (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮৮৩).djvu/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ।
৭১

মুক্ত করিয়া মস্তকে তুলিয়া নৃত্য আরম্ভ করিল! তখন অতিশয় হরিবোলের গোলযোগ পড়িয়া গেল। সত্যানন্দ মহেন্দ্রকে মুক্ত করিয়াই তাহারা যেখানে মুসলমানের গৃহ দেখিল, আগুন ধরাইয়া দিতে লাগিল। কিন্তু এই সকল কার্য্যে তাহাদের অধিক সময় নষ্ট হইল। ইত্যবসরে নগরের রাজা আসদুলজমান বাহাদুর নগরস্থ সৈন্য সকল সংগ্রহ করিলেন, এবং কামান, গোলা, বন্দুক লইয়া সন্তানসম্প্রদায়ের সম্মুখীন হইলেন। সন্তানদিগের অস্ত্র কেবল ঢাল তরবারি ও বল্লম। কামান, গোলা, বন্দুক দেখিয়া তাহারা কিছু ভীত হইল। তোপের মুখে অসংখ্য সন্তান মরিতে লাগিল। তখন সত্যানন্দ বলিলেন, “ফিরিয়া চল, অনর্থক বৈষ্ণববধে প্রয়োজন নাই।” তখন পরাজিত হইয়া সন্তানেরা ম্লানমুখে নগর ত্যাগ করিয়া পুনর্ব্বার জঙ্গলে প্রবেশ করিল।


ঊনবিংশ পরিচ্ছেদ।

 জীবানন্দ চলিয়া গেলে পর শান্তি নিমাইয়ের দাওয়ার উপর গিয়া বসিল। নিমাই মেয়ে কোলে করিয়া তাহার নিকট আসিয়া বসিল। শান্তির চোখে আর জল নাই; শান্তি চোখ মুছিয়াছে, মুখ প্রফুল্ল করিয়াছে, একটু একটু হাঁসিতেছে। কিছু গম্ভীর, কিছু চিন্তাযুক্ত, অন্যমনা। নিমাই বুঝিয়া বলিল,

 “তবু ত দেখা হলো।”

 শান্তি কিছুই উত্তর করিল না। চুপ করিয়া রহিল। নিমাই দেখিল শান্তি মনের কথা কিছু বলিবে না। শান্তি মনের কথা বলিতে ভালবাসে না তাহা নিমাই জানিত। সুতরাং নিমাই চেষ্টা করিয়া অন্য কথা পাড়িল—বলিল,