বৃহৎ হরিণচর্ম্ম বাহির করিয় কণ্ঠের উপর গ্রন্থি দিয়া, কণ্ঠ হইতে জানু পর্য্যন্ত শরীর আবৃত করিল। যদি কোন কবি সেরূপ দেখিত তাহা হইলে এই নবীন “কৃষ্ণত্বচং গ্রন্থিমতীং দধানাকে” দেখিয়া একেবারে মন্মথের বিনাশ দূরে থাকুক পুনরুজ্জীবনের আশঙ্কা করিত। এইরূপে সজ্জিত হইয়া সেই নূতন সন্ন্যাসী গৃহমধ্যে ধীরে ধীরে চারিদিক নিরীক্ষণ করিল। নিরীক্ষণ করিয়া কেহ কোথায় নাই নিশ্চিত বুঝিয়া অতি গোপনে সংরক্ষিত একটি পেটিকা খুলিল। খুলিয়া মোট বাহির করিল। মোট খুলিয়া তাহার ভিতর যাহা ছিল তাহা মাটির ওপরে সাজাইল। কতকগুলি তুলটের পুথি। ভাবিল “এগুলি কি করি, সঙ্গে লইয়া গিয়া কি হইবে? এত বা বহিব কি প্রকারে? রাখিয়া গিয়াই বা কি হইবে? রাখারই বা আর প্রয়োজন কি—দেখিয়াছি জ্ঞানেতে আর সুখ নাই, ও ভস্মরাশিমাত্র—ও ভস্ম ভস্মই হোক।”—এই বলিয়া শান্তি সেই গ্রন্থগুলি একে একে জ্বলন্ত অগ্নিতে নিক্ষেপ করিলেন। কাব্য, সাহিত্য, অলঙ্কার, ব্যাকরণ, আর কি কি তাহা এখন বলিতে পারি না, পুড়িয়া ভস্মাবশিষ্ট হইল। রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর হইলে শান্তি সেই সন্ন্যাসীবেশে দ্বারোদ্ঘাটন পূর্ব্বক অন্ধকারে একাকিনী গভীর বনমধ্যে প্রবেশ করিলেন। গ্রামবাসীগণ সেই নিশীথে কাননমধ্যে অপূর্ব্ব গীতধ্বনি শ্রবণ করিল।
“দড় বড়ি ঘোড়া চড়ি কোথা তুমি যাওরে।”
“সমরে চলিনু আমি হামে না ফিরাও রে।
হরি হরি হরি হরি বলি রণরঙ্গে,
ঝাঁপ দিব প্রাণ আজি সমর তরঙ্গে,
- ↑ রাগিণী বাগীশ্বরী—তাল আড়া।