বড় বীরজাতি। পদচিহ্নের দুর্গ হইতে ১৭টা কামান আসিতেছে—কামান পৌঁছিলে আমরা যুদ্ধযাত্রা করিব। ঐ দেখ, প্রভাত হইতেছে—বেলা চারি দণ্ড হইলেই— ও কি ও—”
“গুডুম্—গুড়ম্—গুম্!” অকস্মাৎ চারি দিকে বিশাল কাননে তোপের আওয়াজ হইতে লাগিল। তোপ ইংরেজের। জালনিবদ্ধ মীনদলবৎ কাপ্তেন টমাস সন্তানসম্প্রদায়কে এই আম্রকাননে ঘিরিয়া বন্ধ করিবার উদ্যোগ করিয়াছে।
নবম পরিচ্ছেদ
“গুড়ুম্ গুড়ুম্ গুম্।” ইংরেজের কামান ডাকিল। সেই শব্দ বিশাল কানন কম্পিত করিয়া প্রতিধ্বনিত হইল, “গুডুম্ গুডুম্ গুম্।” নদীর বাঁকে বাঁকে ফিরিয়া সেই ধ্বনি দূরস্থ আকাশপ্রান্ত হইতে প্রতিক্ষিপ্ত হইল, “গুডুম্ গুডুম্ গুম্।” নদীপারে দূরস্থ কাননান্তরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া সেই ধ্বনি আবার ডাকিতে লাগিল, “গুডুম্ গুডুম্ গুম্!” সত্যানন্দ আদেশ করিলেন, “তোমরা দেখ, কিসের তোপ।” কয়েক জন সন্তান তৎক্ষণাৎ অশ্বারোহণ করিয়া দেখিতে ছুটিল, কিন্তু তাহারা কানন হইতে বাহির হইয়া কিছু দূর গেলেই শ্রাবণের ধারার ন্যায় গোলা তাহাদের উপর বৃষ্টি হইল, তাহারা অশ্বসহিত আহত হইয়া সকলেই প্রাণত্যাগ করিল। দূর হইতে সত্যানন্দ তাহা দেখিলেন। বলিলেন, “উচ্চ বৃক্ষে উঠ, দেখ কি।” তিনি বলিবার অগ্রেই জীবানন্দ বৃক্ষে আরোহণ করিয়া প্রভাতকিরণে দেখিতেছিলেন, তিনি বৃক্ষের উপরিস্থ শাখা হইতে ডাকিয়া বলিলেন, “তোপ ইংরেজের।” সত্যানন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন, “অশ্বারোহী, না পদাতি?”
জীব। দুই আছে।
সত্যা। কত?
জীব। আন্দাজ করিতে পারিতেছি না, এখনও বনের আড়াল হইতে বাহির হইতেছে।
সত্যা। গোরা আছে? না কেবল সিপাহী?
জীব। গোরা আছে।
তখন সত্যানন্দ জীবানন্দকে বলিলেন, “তুমি গাছ হইতে নাম।”
জীবানন্দ গাছ হইতে নামিলেন।