পাতা:আনন্দমঠ - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
আনন্দমঠ

বীরধর্ম কখন ত্যাগ করিও না। দেখ—আমাকে একটা কথা বলিয়া যাও—এ ব্রতভঙ্গের প্রায়শ্চিত্ত কি?”

 জীবানন্দ বলিলেন, “প্রায়শ্চিত্ত-দান—উপবাস—২২ কাহণ কড়ি।”

 শান্তি ঈষৎ হাসিল। বলিল, “প্রায়শ্চিত্ত কি, তা আমি জানি। এক অপরাধে যে প্রায়শ্চিত্ত-শত অপরাধে কি তাই?”

 জীবানন্দ বিস্মিত ও বিষন্ন হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “এ সকল কথা কেন?”

 শান্তি। এক ভিক্ষা আছে। আমার সঙ্গে আবার দেখা না হইলে প্রায়: করিও না।

 জীবানন্দ তখন হাসিয়া বলিল, “সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাকিও। তোমাকে না দে প্লা আমি মরিব না। মরিবার তত তাড়াতাড়ি নাই। আর আমি এখানে থাকিব না, স্তু চোখ ভরিয়া তোমাকে দেখিতে পাইলাম না, এক দিন অবশ্য সে দেখা দেখিব। এক দিন অবশ্য আমাদের মনস্কামনা সফল হইবে। আমি এখন চলিলাম, তুমি আমার এক অনুরোধ রক্ষা করিও। এ বেশভূষা ত্যাগ কর। আমার পৈতৃক ভিটায় গিয়া বাস কর।”

 শান্তি জিজ্ঞাসা করিল, “তুমি এখন কোথায় যাইবে?”

 জীবা। এখন মঠে ব্রহ্মচারীর অনুসন্ধানে যাইব। তিনি যে ভাবে নগরে গিয়াছেন, তাহাতে কিছু চিন্তাযুক্ত হইয়াছি; দেউলে তাঁহার সন্ধান না পাই, নগরে যাইব। হবে?


সপ্তদশ পরিচ্ছেদ

 ভবানন্দ মঠের ভিতর বসিয়া হবিগুণ গান করিতেছিলেন। এমত সময়ে বিষমুখে জ্ঞানাননামা এক জন অতি তেজস্বী সন্তান তাহার কাছে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। ভবানন্দ বলিলেন, “গোঁসাই, মুখ অত ভারি কেন?”

 জ্ঞানানন্দ বলিলেন, “কিছু গোলযোগ বোধ হইতেছে। কালিকার কাটার জন্য নেড়েরা গেরুয়া কাপড় দেখিতেছে, আর ধরিতেছে। অপরাপর সন্তানগণ আজ সকলেই গৈরিক বসন ত্যাগ করিয়াছে। কেবল সত্যানন্দ প্রভু গেরুয়া পরিয়া একা নগরাভিমুখে গিয়াছেন। কি জানি, যদি তিনি মুসলমানের হাতে পড়েন।”