পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অদল বদল
১০৯

করছিলেন, এমন সময় শিখণ্ডীর সঙ্গে নারদ সেখানে উপস্থিত হলেন।

 সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে আয়ান বললেন, দেবর্ষি, আমি ধন্য যে আপনার দর্শন পেলাম। এই সুন্দরীকে তো চিনতে পারছি না।

 নারদ বললেন, ইনি পঞ্চালরাজ দ্রুপদের কন্যা শিখণ্ডিনী। ভগবান শূলপাণি একটি কঠোর ব্রত পালনের ভার এঁর উপর দিয়েছেন। সেই ব্রত উদ্‌যাপিত না হওয়া পর্যন্ত এঁকে অনূঢ়া থাকতে হবে। কিন্তু কোনও সদাশয় ধর্মপ্রাণ পুরুষের সাহায্য ভিন্ন এঁর সংকল্প পূর্ণ হবে না। মহামতি আয়ান, আমি দিব্যচক্ষুতে দেখছি তুমিই সেই ভাগ্যবান পুরুষ। এঁর অনুরোধ রক্ষা কর, ব্রত সমাপ্ত হলেই এই অশেষ গুণবতী ললনা তোমাকে পতিত্বে বরণ করবেন, তোমার জীবন ধন্য হবে।

 একটি সুদীর্ঘ নিশ্বাস ত্যাগ করে আয়ান বলেন, হা দেবর্ষি, আমার জীবন কি করে ধন্য হবে? আমার সংসার থাকতেও নেই, গৃহ শূন্য। লোকে আমাকে অবজ্ঞা করে, অপদার্থ কাপুরুষ বলে, অন্তরালে ধিক্‌কার দেয়। তাই জনসংস্রব বর্জন করে এই নিভৃত স্থানে বাস করছি। এই বরবর্ণিনী রাজকন্যা আমার ন্যায় হতভাগ্যের কাছে কেন এসেছেন?

 শিখণ্ডী মধুর কণ্ঠে বললেন, গোপশ্রেষ্ঠ মহাত্মা আয়ান, আপনার গুণরাশি শুনে দূর থেকেই আমি মোহিত হয়েছিলাম, এখন আপনাকে দেখে আমি অভিভূত হয়েছি, আপনার চরণে মনঃপ্রাণ সমর্পণ করছি।

 আয়ান বললেন, আমার বঞ্চিত ধিক্‌কৃত জীবনে এমন সৌভাগ্যের উদয় হবে তা আমি স্বপ্নেও আশা করি নি। মনোহারিণী শিখণ্ডিনী, তোমাকে অদেয় আমার কিছুই নেই। আমার কাছে তুমি কি চাও বল।