পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/১১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজমহিষী
১১৩

আছে। হংসেশ্বর আশা করেন তাঁর রাজমহিষীই রাজ্যপাল গোল্ড মেডাল পাবে।

 হংসেশ্বরের মেয়ে চকোরী কলকাতায় তার মামাদের তত্ত্বাবধানে থেকে কলেজে পড়ত। এখন পড়া শেষ করে রাধানাথপুরে তার বাপমায়ের কাছে আছে, মাঝে মাঝে দু-দশ দিনের জন্যে কলকাতায় যায়। চকোরী লম্বা, রোগা, দাঁত বড় বড়, চোয়াল উচু, গায়ের স্বাভাবিক রঙ ময়লা। সর্বাঙ্গীণ পরিপাটী মেক-অপ সত্ত্বেও তাকে সুন্দরী বলে ভ্রম হয় না। চকোরীর হিংসুটে সখীরা বলে, রূপ তো আহামরি বিদ্যাধরী, গুণে মা মনসা, শুধু ওর বাপের সম্পত্তির লোভে খোশামুদেগুলো জোটে।

 মেয়ের বিবাহের জন্যে হেমাঙ্গিনীর কিছুমাত্র চিন্তা নেই, হংসেশ্বরও ব্যস্ত নন। তিনি বলেন, চকোরী হুঁশিয়ার হিসেবী মেয়ে, বোকা-হাবার মতন চোখ বুজে বাজে লোকের সঙ্গে প্রেমে পড়বে না, চটক দেখে বা মিষ্টি-মধুর বুলি শুনেও ভুলবে না। তাড়াহুড়োর দরকার কি, আজকাল তো ত্রিশ পঁয়ত্রিশের পরে মেয়েদের বিয়ের রেওয়াজ হয়েছে। চকোরী সুবিধে মতন নিজেই যাচাই করে একটা ভাল বর জুটিয়ে নেবে।


কোরীর প্রেমের যত উমেদার আছে তার মধ্যে সব চেয়ে নাছোড়বান্দা হচ্ছে বংশীধর। সম্প্রতি সে পি-এচ. ডি. ডিগ্রী পেয়ে টালিগঞ্জ কলেজে একটা প্রোফেসরি পেয়েছে, বটানি আর জোঅলজি পড়ায়। তার বাবা শশধর চৌধুরী দু বছর হল মারা গেছেন। তিনি উকিল ছিলেন, হংসেশ্বরের কলকাতার সম্পত্তি তদারক করতেন। বংশীধরের মামার বাড়ি রাধানাথপুরে, সেখানে সে মাঝে মাঝে যায়।