পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/১৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবজাতক
১২৯

 তারক জ্যোতিষী বলল, আটটা বেজে তিন মিনিট, আহাহা, আর দু মানট পরে হলেই খাসা হত। যাই হক, আমার গণনায় ভুল হয় নি, পুত্র সন্তানই হয়েছে।

 ভুজঙ্গ ভঞ্জ বলল, তা তুমি জানলে কি করে?

 —ওই যে, হুলো বেরালের মতন ডেকে উঠল। মেয়ে হলে উয়াঁ উয়াঁ করত।

 কবি শ্রীকণ্ঠ নন্দী এতক্ষণ চুপ করে বসেছিলেন। এখন বললেন, তারকবাবুর কথা ঠিক। কৃত্তিবাস তাঁর রামায়ণে লিখেছেন, জনক রাজা লাঙল চালাতে চালাতে হঠাৎ দেখলেন, মাটির ডেলা থেকে ছোট্র একটি মেয়ে বেরিয়েছে, ‘উঙা উঙা করি কাঁদে যেন সৌদামিনী।’

 ভুজঙ্গ ভঞ্জ বলল, তারকের মতন গুনে বলতে সবাই পারে। হয় ছেলে না হয় মেয়ে, এই দুটোর মধ্যে একটা যদি বাই চান্স মিলে যায় তাতে বাহাদুরিটা কি?

 সোমনাথের ভাগনী তোতা শাঁখ বাজাতে বাজাতে এসে বলল, মামীর খোকা হয়েছে, এই আ্যাত্তো বড়, গোলাপ ফলের মতন লাল টুকটুকে।

 পাঁচুবাবু বললেন, লাল টুকটুকে রঙ এক মাসের মধ্যেই নবঘনশ্যাম হয়ে যাবে। তোর মামা কি করছে রে?

 —নর্স বলছে চলে যেতে, কিন্তু মামা ঘর থেকে নড়বে না, খালি খালি ছেলের দিকে চেয়ে আছে।

 —হুঁ। প্রথম যখন ছেলে হল ভাবলুম বাহা বাহা রে। সোমনাথের সেই দশা হয়েছে। আর দেরি করে কি হবে, আমাদের আশীর্বাদটা এখনই সেরে ফেলা যাক। সোমনাথকে ডাকবার দরকার নেই, পরে জানিয়ে দিলেই চলবে। সে এখন পুত্রের চন্দ্রমুখ নিরীক্ষণ করতে থাকুক। সত্যার্থী মশায়, আপনিই আরম্ভ করুন।