পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নবজাতক
১৩১

লম্পট না হয়। বহু লোককে সে প্রতইপালন করুক, প্রচুর উপার্জন করে জনহিতার্থে ব্যয় করুক, কিন্তু বেশী টাকা জমিয়ে রেখে যেন বংশধরদের মাথা না খায়। তার অসংখ্য বন্ধু হক, গোটা কতক শত্রুও হক, নইলে সে আত্মগর্বী হয়ে পড়বে। সে সাহিত্য বিজ্ঞান দর্শন কর্মযোগ জ্ঞানযোগ ভক্তিযোগ যত খুশি চর্চা করুক, কিন্তু যেন বুদ্ধ যিশু শংকর আর শ্রীচৈতন্যের মতন সংসারত্যাগী না হয়। তার মহা-পুরুষ পরমপুরুষ বা অবতার হবার কিছুমাত্র দরকার নেই। তবে হাঁ, বঙ্কিমচন্দ্র কাটছাঁট করে যে রকম bowdlerized নির্দোষ সর্ব-গুণান্বিত আদর্শ পুরুষ শ্রীকৃষ্ণ খাড়া করেছেন সে রকম যদি হতে পারে তাতে আমাদের আপত্তি নেই। মোট কথা, আমরা চাই সোমনাথের ব্যাটা একজন মান্য গণ্য স্বনামধন্য চৌকশ পরিপূর্ণ পুংপুরুষ হয়ে উঠুক, যাকে বলে hundred percent he-man.

 ভুজঙ্গ ভঞ্জ বলল, পাঁচু-দা ভালই বলেছেন, তবে ওঁর আশীর্বাদে বুর্জোআ ভাব প্রকট হয়েছে। প্রজার ভাগ্য আর রাষ্ট্রের ভাগ্য এক সঙ্গে জড়িত, রাষ্ট্রের সংস্কার না হলে প্রজার সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল হতে পারে না। অতএব রাষ্ট্র আর প্রজা দুইএরই মঙ্গলকামনায় আমি বলছি—এই সদ্যোজাত ভারতসন্তান যেন এমন শাসনতন্ত্রের আশ্রয় পায় যা তাকে সর্বাত্মক শিক্ষা দেবে, তার সামর্থের উপযুক্ত কর্ম দেবে, তার প্রয়োজনের উপযুক্ত জীবিকার ব্যবস্থা করবে, সে যেন কায়মনোবাক্যে রাষ্ট্রবিধির বশবর্তী হয়, তার চিত্ত পরব্রহ্মে লীন না হয়ে যেন রাষ্ট্রেই লীন হয়। সে যেন বোঝে, সে রাষ্ট্রেরই একটি অবয়ব, হাত পা প্রভৃতির মতন সেও এক বিরাট মস্তিষ্কের অধীন, তার স্বাতন্ত্র্য নেই।

 পাঁচুবাবু বললেন, তুমি বলতে চাও এই শিশু রাষ্ট্রদাস হয়ে জন্মেছে, চিরকাল রাষ্ট্রদাস হয়েই থাকবে। তার নিজের মতে চলবার