পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সত্যসন্ধ বিনায়ক

বিনায়ক সামন্ত হাসপাতালে মারা গেছে। অখ্যাত হলেও সে অসামান্য, মহাত্মা গান্ধীর মতনই সে একগুঁয়ে সত্যাগ্রহী ছিল। তফাত এই—গান্ধীজী অবস্থা বুঝে রফা করতে পারতেন, কিন্তু বিনায়কের তেমন বুদ্ধি ছল না। একজন অর্ধোন্মাদ নিজের খেয়ালে বা অন্যের প্ররোচনায় গান্ধীজীকে মেরেছিল। বিনায়ক মরেছে অসংখ্য লোকের দুর্নীতি আর নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে। তার মৃত্যুর জন্যে হয়তো আমরা সকলেই একট আধটু দায়ী। আমরা বাধ্য হয়ে অনেক অন্যায় করে থাকি, আরও অনেক অন্যায় সয়ে থাকি, তারই পরিণাম বিনায়কের অপমৃত্যু। মরা ভিন্ন তার গত্যন্তর ছিল না, কারণ কাণ্ডজ্ঞানহীন নিষ্পাপ একগুঁয়ে কর্মবীরের জগতে স্থান নেই। কিছ পাপাচরণ না করলে এই পাপময় সংসারে জীবনধারণ অসম্ভব এই মোটা কথাটা বিনায়ক বুঝত না।

 যারা তাকে চিনত তাদের সকলেরই বিশ্বাস যে বিনায়কের মাথায় বিলক্ষণ গোল ছিল, ঠিক পাগল না হলেও তাকে বাতিকগ্রস্ত বলা যায়। কিন্তু সে যে অত্যন্ত সাধু আর দেশপ্রেমী ছিল তাতে কারও সন্দেহ নেই। অল্প বয়সে সে বিপ্লবীদের দলে যোগ দিয়েছিল, পরে স্বদেশী আর অসহযোগ নিয়ে মেতেছিল। তার পর একে একে কংগ্রেস কমিউনস্ট প্রজা-সোস্যালিস্ট হিন্দুমহাসভা প্রভৃতি নানা দলে মিশে অবশেষে সে স্থির করেছিল, রাজনীতি অতি জঘন্য কুটিল পন্থা, সব দল ত্যাগ করে শুধু সত্যের শরণ নিতে হবে, প্রিয় বা অপ্রিয় যাই হক শুধু সত্যেরই ঘোষণা করতে হবে, তার পরিণাম কি দাঁড়াবে