পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/১৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সত্যসন্ধ বিনায়ক
১৪৫

ভাববার দরকার নেই। অর্থাৎ সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য, আর মা ফলেষু কদাচন—গীতার এই দুই মন্ত্রই সে মেনে নিয়েছিল।

 বিনায়কের সঙ্গে অনেক কাল দেখা হয় নি, তার পর একদিন সে অদ্ভুত বেশে আমাদের সান্ধ্য আড্ডায় উপস্থিত হল। পরনে ফিকে বেগনী রঙের ধুতি-পঞ্জাবি, কাঁধ থেকে একটা থলি ঝুলছে, তারও রঙ বেগনী। আমি আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলুম, ব্যাপার কি বিনায়ক, এখন কোন পার্টিতে আছ? বাইরে একটি দঙ্গল দেখছি, ওরা তোমার চেলা নাকি?

 বিনায়ক বলল, ওদের ভেতরে আসতে বলব? দশ জন আছে, আপনার এই তক্তপোশে জায়গা না হয় তো মেঝেতেই বসবে।

 অনুমতি দিলে বিনায়কের সঙ্গীরা ঘরে এসে কতক তক্তপোশে কতক মেঝেতে বসে পড়ল। তাদের বয়স ষোল থেকে ত্রিশের মধ্যে, সকলেরই বেগনী সাজ আর কাঁধে ঝুলি। চায়ের ফরমাশ দিচ্ছিলুম, কিন্তু বিনায়ক বলল, আমরা নেশা করি না, চা সিগারেট পান কিচ্ছু না।

 বললুম, খুব ভাল। এখন আমাদের কৌতূহল নিবৃত্ত কর। নতুন পার্টি বানিয়েছ দেখছি, নাম কি, উদ্দেশ্য কি, সব খোলসা করে বল।

 বিনায়ক বলল, আমাদের দলের নাম সত্যসন্ধ সংঘ। উদ্দেশ্য, নির্ভয়ে সত্যের প্রচার। এই ইলেকশনে আমরা লড়ব।

 —বল কি হে! তোমাদের পার্টির মেম্বার ক জন? টাকার জোর আছে? কংগ্রেস কমিউনিস্ট প্রজা-সোস্যালিস্ট হিন্দু মহাসভা এদের সঙ্গে লড়তে চাও কোন্ সাহসে? তোমাদের ভোট দেবে কে?

 পরম ঘৃণায় মুখভঙ্গী করে বিনায়ক বলল, আমরা ইলেকশনে দাঁড়াব না, নিজের জন্যে বা বিশেষ কারও জন্যে ভোটও চাইব না।