পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
যযাতির জরা
১৫৫

আমাকে ক্ষমা করুন। একবার আপনার আজ্ঞা শিরোধার্য করেছিলাম, কিন্তু আপনার এই নূতন আজ্ঞা পালনের অভিরুচি আমার নেই, আপনি কৃপা করে প্রত্যাহার করুন। আমি যৌবন ফিরে চাই না, আপনিই তা ভোগ করতে থাকুন, আমি জরাতেই তুষ্ট।

 যযাতি বললেন, পুত্র, তুমি আমাকে অবাক করলে। আমার অনুরোধে তুমি জরা নিয়েছিলে, কালক্রমে সেই জরা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন তা থেকে মুক্ত হতে কেন চাও না তা আমি বুঝতে পারছি না।

 পুরু বললেন, পিতা, আমাদের দুজনের বর্তমান অবস্থাটা বিচার করে দেখুন। যখন আপনি আমার যৌবন নিয়ে আপনার জরা আমাকে দিয়েছিলেন তখন আমার বয়স ছিল বিশ, আর আপনার ছিল ষাট। তার পর পঁচিশ বৎসর কেটে গেছে। এখন আপনি পঁয়তাল্লিশ বৎসরের প্রৌঢ়, আর আমি পঁচাশি বৎসরের স্থবির। আপনার প্রৌঢ়তার প্রতি আমার কিছুমাত্র লোভ নেই। জরাগ্রস্ত হবার পর থেকে আমি শাস্ত্রপাঠ যোগচর্চা আর অধ্যাত্মচিন্তায় নিরত আছি, ইন্দ্রিয়ভোগে আমার আসক্তি নেই, সর্ববিধ বিষয়তৃষ্ণা লোপ পেয়েছে। আমি দারপরিগ্রহ করি নি, পরমা সুন্দরী রমণী দেখলেও আমার চিত্তচাঞ্চল্য হয় না, অতি সুস্বাদ মাংস বা মিষ্টান্নেও আমার রুচি নেই। এই শান্তিময় অবস্থার আমি পরিবর্তন করতে চাই না। এখন আমি মোক্ষলাভের জন্য তপস্যা করছি, আপনার সঙ্গে বয়স বিনিময় করলে আমার পঁচিশ বৎসরের সাধনা পণ্ড হবে।

 যযাতি এখন স্বাস্থ্যবান সবল মধ্যবয়স্ক, তাঁর চুল আর গোঁফে মোটেই পাক ধরে নি, দেখলে ত্রিশ বৎসরের যুবা বলেই মনে হয়। তাঁর পুত্র পুরু পচাশি বৎসরের বৃদ্ধ, মাথায় এখনও কিছু পাকা চুল অবশিষ্ট আছে, মুখে প্রকাণ্ড সাদা দাড়ি-গোঁফ। প্রৌঢ় যযাতি