পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৮
আনন্দীবাঈ ইত্যাদি

ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয়গণ, অবধান করুন। কুরুরাজ যযাতির আর যৌবনভোগের ইচ্ছা নেই, কোনও জরাগ্রস্ত সৎপাত্রের সঙ্গে তাঁর বয়স বিনিময় করতে চান। শ্রীযযাতির বর্তমান বয়স পঁয়তাল্লিশ, পূর্ণ যৌবনেরই তুল্য। প্রার্থী স্থবিরগণ আগামী অমাবস্যায় পূর্বাহ্ণে হস্তিনাপুরে রাজভবনের চত্বরে উপস্থিত হবেন। মহারাজ স্বয়ং নির্বাচন করবেন, যাঁকে যোগ্যতম মনে করবেন তাঁর সঙ্গেই বয়স বিনিময় করবেন। তাঁর সিদ্ধান্তের কোনও প্রতিবাদ গ্রাহ্য হবে না।

 নির্দিষ্ট দিনে প্রায় এক হাজার জরাগ্রস্ত ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় হস্তিনাপুরে এলেন। এঁদের বয়স এক শ থেকে ষাট। কেউ কুঁজো হয়ে পড়েছেন, লাঠিতে ভর দিয়ে চলেন। কেউ দৃষ্টিহীন, অপরের হাত ধরে এসেছেন। কেউ চলতেই পারেন না, ডুলিতে চড়ে এসেছেন। যযাতির সংকল্পের সংবাদ পেয়ে দেবলোক থেকে দুই অশ্বিনীকুমার আর দেবর্ষি নারদও কৌতূহলবশে উপস্থিত হলেন, কিন্তু আত্মপ্রকাশ না করে অগোচরে রইলেন।

 সমবেত প্রার্থিগণকে স্বাগত জানিয়ে যযাতি তাঁদের পরীক্ষা করতে যাচ্ছেন এমন সময় একদল বৃদ্ধা ভিড় ঠেলে এগিয়ে এলেন। তাঁদের নেত্রী একজন বর্ষীয়সী ব্রাহ্মণী। তাঁর মস্তক প্রায় কেশশূন্য, ললাটে বৈধব্যের প্রতিষেধক একটি প্রকাণ্ড সিন্দূরের ফোঁটা, পরিধানে রক্তবর্ণ পট্টবাস। ইনি কম্পিত কণ্ঠে বললেন, কুরুরাজ যযাতি, শাস্ত্রে আছে যৌবন ধনসম্পত্তি প্রভুত্ব আর অবিবেকিতা, এর প্রত্যেকটি অনর্থকর, দুর্দৈবক্রমে আপনাতে চারটিই একত্র হয়েছে। এক যৌবনেই রক্ষা নেই, আপনি দুই যৌবন ভোগ করেছেন, সুতরাং যৌবনাক্রান্ত ধেড়ে-রোগগ্রস্ত বৃদ্ধ কি প্রকার জীব তা ভালই জানেন। যে বৃদ্ধের সঙ্গে আপনি বয়স বিনিময় করবেন সে নিশ্চয় যুবতী ভার্যা ঘরে আনবে। তখন তার বৃদ্ধা পত্নীর কি দশা হবে ভেবে দেখেছেন কি?