পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/১৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬০
আনন্দীবাঈ ইত্যাদি

 বহু প্রার্থী একে একে এসে রাজসম্মুখে নিজের নিজের গুণাবলী বিবৃত করলেন, কিন্তু যযাতি কাকেও তাঁর মহৎ দানের যোগ্য পাত্র মনে করলেন না। সহসা একটা গুঞ্জন উঠল, জনতা সসম্ভ্রমে দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পথ ছেড়ে দিল। দুজন পক্ককেশ পক্কশ্মশ্রু বৃদ্ধ একটি অপূর্ব রূপলাবণ্যবতী ললনার হাত ধরে রাজার সম্মুখে এলেন।

 যযাতি বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কে আপনারা দ্বিজদ্বয়? এই বরবর্ণিনী সুন্দরী যাঁর আগমনে সভা উদ্‌ভাসিত হয়েছে ইনিই বা কে?

 দুই বৃদ্ধের মধ্যে যিনি বয়সে বড় তিনি বললেন, মহারাজ, আমরা বিন্ধ্যপাদস্থ তপোবন বিল্বাশ্রম থেকে আসছি। মহাতপা ভল্লাতক ঋষির নাম শুনে থাকবেন, আমি তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র বিভীতক, আর কনিষ্ঠ এই হরীতক। এই রূপবতী কুমারী হচ্ছেন সুবর্তরাজ মিত্রসেনের কন্যা মনোহরা। প্রৌঢ় বয়সে মিত্রসেনের পত্নীবিয়োগ হলে তিনি বানপ্রস্থ গ্রহণের সংকল্প করলেন এবং পুত্রকে রাজপদে অভিষিক্ত করে একমাত্র কন্যার বিবাহের জন্য উদ্‌যোগী হলেন। কিন্তু এই মনোহরা বললেন, পিতা, বিবাহ থাকুক, আমিও বনে যাব, নইলে আপনার সেবা করবে কে? কন্যার অত্যন্ত আগ্রহ দেখে মিত্রসেন সম্মত হলেন এবং তাঁর কুলগুরু আমাদের পিতা ভল্লাতকের আশ্রমের নিকটে কুটীর নির্মাণ করে সেখানে বাস করতে লাগলেন। আমাদের পিতার অনেক বয়স হয়েছিল, কিছুকাল পরে তিনি স্বর্গে গেলেন। সম্প্রতি রাজা বসুমিত্রও পনরো বৎসর অরণ্যবাসের পর দেহত্যাগ করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি বললেন, হা, কন্যাকে অনূঢ়া রেখেই আমাকে যেতে হচ্ছে! গুরুপুত্র বিভীতক ও হরীতক, এর ভার তোমরা নাও, কালবিলম্ব না করে এর বিবাহ দিও, কিন্তু বৃদ্ধের সঙ্গে কদাচ নয়, বৃদ্ধপতিতে আমার কন্যার রুচি নেই। রাজার মৃত্যুর পর