পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪
আনন্দীবাঈ ইত্যাদি

কাঁচা-পাকা দাড়ি, কপালে ভস্মের ত্রিপুণ্ড্রক, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, মাথায় কান ঢাকা গেরুয়া টুপি, গায়ে গেরুয়া আলখাল্লা, পায়ে গেরুয়া ক্যামবিসের জুতো, হাতে একটি অ্যালুমিনিয়মের প্রকাণ্ড কমণ্ডলু বা হাতলযুক্ত বদনা। আগন্তুক ঘরে এসেই বাজখাঁই গলায় বললেন, নমস্তে মশাইরা, খবর সব ভাল তো?

 কপিল গুপ্ত বললেন, আরে বকশী মশাই যে, আসতে আজ্ঞা হ’ক।[১] দু বছর দেখা নেই, এতদিন ছিলেন কোথায়? ভোল ফিরিয়েছেন দেখছি, সাধু মহারাজ হলেন কবে থেকে? বাঃ, দাড়িটিতে দিব্বি পার্মানেণ্ট ওয়েভ করিয়েছেন! কত খরচ পড়ল?

 রামতারণ মুখুজ্যে বললেন, শোন হে জটাধর বকশী, দু-দু বার ঠকিয়ে গেছ, এবারে আর তোমার নিস্তার নেই, পুলিসে দেব।

 অতুল হালদার বললেন, হাঁ হাঁ বাবা, দু-দু বার ঘুঘু, তুমি খেয়ে গেছ ধান, এই বার ফাঁদে ফেলে বধিব পরান।

 কপিল গুপ্ত বললেন, আহা, ভদ্রলোককে একটু হাঁফ ছেড়ে জিরুতে দিন, এঁর সমাচার সব শুনুন, তার পর পুলিস ডাকবেন। ও কালীবাবু, বকশী মশাইকে চা আর খাবার দাও, আমার অ্যাকাউণ্টে।

 রবি বর্মার ছবিতে যেমন আছে—মেনকার কোলে শিশু শকুন্তলাকে দেখে বিশ্বামিত্র মুখ ফিরিয়ে হাত নাড়ছেন—সেই রকম ভঙ্গী করে জটাধর বললেন, না না, আর লজ্জা দেবেন না, আপনাদের ঢের খেয়েছি, এখন আমাকেই সেই ঋণ শোধ করতে হবে।

 রামতারণ বললেন, তোমার অচলার কি খবর, সেই যাকে বিধবা বিবাহ করেছিলে?

 ফোঁস করে একটি সুদীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে জটাধর বললেন, তার

  1. জটাধর বকশীর পূর্বকথা ‘কৃষ্ণকলি’ ও ‘নীল তারা’ গ্রন্থে আছে।