পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বটেশ্বরের অবদান

টেশ্বর সিকদার একজন প্রখ্যাত গ্রন্থকার এবং বাণীর একনিষ্ঠ সাধক, অর্থাৎ পেশাদার লেখক। যাঁদের লেখা ছাড়া অন্য কর্ম নেই তাঁদের প্রায় অর্থাভাব দেখা যায়, কিন্তু বটেশ্বর ধনী লোক। এই ব্যতিক্রমের কারণ— তিনি প্রথম শ্রেণীর সাহিত্যিক, শুধু বড় বড় উপন্যাস লেখেন, দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর লেখকদের মতন ছোট গল্প প্রবন্ধ কবিতা রম্যরচনা ভ্রম্যরচনা ইত্যাদি লিখে প্রতিভার অপচয় করেন না। তাঁর কোনও উপন্যাস সাত শ পৃষ্ঠার কম নয় এবং প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা দেশের বুভুক্ষু পাঠক-পাঠিকারা তা গোগ্রাসে পড়ে ফেলেন এবং পরবর্তী রচনার জন্য ব্যগ্র হয়ে প্রতীক্ষা করেন। সম্প্রতি তাঁর পঁয়ষট্টিতম জন্মদিনের উৎসব খুব ঘটা করে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 সকালবেলা বটেশ্বর তাঁর সাধনকক্ষে বসে লিখছেন এবং মাঝে মাঝে একটি বড় টিপট থেকে চা ঢেলে খাচ্ছেন, এমন সময় একটি অচেনা যুবক ঘরে এসে ঝুঁকে নমস্কার করে বলল, আমার নাম প্রিয়ব্রত রায়, পাঁচ মিনিট সময় দিতে পারবেন কি?

 আগন্তুকের বয়স প্রায় ত্রিশ, সুশ্রী চেহারা, সজ্জায় দারিদ্র্যের লক্ষণ নেই, পারিপাট্যও নেই। বটেশ্বর একটা চেয়ার দেখিয়ে বললেন, ব’স। নতুন পত্রিকা বার করছ, তার জন্যে আমার লেখা চাও, এই তো? আগেই বলে দিচ্ছি, আমি কল্পতরু নই, যে চাইবে তাকেই লেখা দিতে পারি না। একটা আশীর্বাণী যদি চাও তো দিতে পারি, দশ টাকা লাগবে।