পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বটেশ্বরের অবদান
২৭

সঙ্গে শর্বরীর বিয়ে হবে, ওই যে মেয়েটি পাঁচটি বৎসর হেমন্তর জন্য প্রতীক্ষা করেছে।

 টেবিলে কিল মেরে সঞ্জীব ডাক্তার বললেন, অ্যাবসর্ড, তা হতেই পারে না। অলকার স্বামী হল তার হকের ধন, অন্য মেয়ে তাকে কেড়ে নেবে কেন?

 —শর্বরীর কথাটাও ভেবে দেখুন ডাক্তার চ্যাটার্জি। রূপে গুণে বিদ্যায় স্বাস্থ্যে সে অলকার চাইতে ভাল। এত বৎসর প্রতীক্ষার পর হেমন্তকে না পেলে তার বুক যে ফেটে যাবে!

 —ফাটলেই হল! বুক অত সহজে ফাটে না মশাই, খুব শক্ত টিশুতে তৈরী। হার্ট খারাপ হয় তো চিকিৎসা করাবেন, ডিজিটালিস অ্যামিনোফাইলিন খেলিন এই সব দেবেন। বুকে বোরিক কমপ্রেস, তিসির পুলটিস আর আইসব্যাগ লাগাবেন। শর্বরীর বিয়ে নাই বা দিলেন, তাকে রাজকুমারী অমৃত কাউরের কাছে পাঠিয়ে দিন, তিনি তাকে নর্সিং শেখাবার ব্যবস্থা করবেন।

 —আপনি আমার লেখা পড়ে উত্তেজিত হয়েছেন, কাল্পনিক পাত্রপাত্রীদের জীবন্ত মনে করেছেন, এ আমার পক্ষে গৌরবের বিষয়। কিন্তু একটু স্থির হয়ে লেখকের দিকটাও বিবেচনা করুন। মিলনান্ত বিয়োগান্ত দু রকম গল্পই আমাদের লিখতে হয়। ভগবান সুখ দেন, দুঃখ দেন, মানুষকে রক্ষা করেন, আবার মারেনও। তিনি মিলন-বিরহ দিয়ে সংসার সৃষ্টি করেছেন। আমরা লেখকরা ভগবানেরই অনুসরণ করি। লোকে নিজে শোক পেতে চায় না, কিন্তু ট্রাজেডি বেশ উপভোগ করে। সেই জন্যেই তো মহাকবিরা সীতা, অজমহিষী ইন্দুমতী, ওফেলিয়া, ডেসডিমোনা ইত্যাদির সৃষ্টি করেছেন। ভগবান সব সময় দয়া করেন না, আমরাও করি না।

 —কি বলছেন মশাই, ভগবানের নকল করবেন এতদূর আম্পর্ধা!