পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দুই সিংহ

বেচারাম সরকার খুব ধনী লোক, যুদ্ধের সময় কনট্রাক্টরি করে প্রচুর রোজগার করেছেন। এখন তাঁর কারবার বিশেষ কিছু নেই, কিন্তু তার জন্যে খেদও নেই। বেচারামের লোভ অসীম নয়, তিনি থামতে জানেন। যা জমিয়েছেন তাতেই তিনি তুষ্ট, বরং ব্যবসার ঝঞ্ঝাট আর পরিশ্রম থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে এখন হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন।

 বেচারাম সুশিক্ষিত নন। তাঁর পত্নী সুবালা সেকেলে পাড়াগেঁয়ে মহিলা, একটু আধটু গল্পের বই পড়েন, তাও সব বুঝতে পারেন না। তাঁদের দুই সন্তান সুমন্ত আর সুমিত্রা কলেজে পড়ছে, তাদের রুচি আধুনিক, বাপ-মায়ের কথাবার্তা আর চালচলনে লজ্জা পায়। তারা স্পষ্টই বলে— বাবা কেবল টাকাই রোজগার করেছেন, শুধু পঞ্জাবী গুজরাটী মারোয়াড়ী আর বড়-সায়েব ছোট-সায়েবদের সঙ্গে মিশেছেন, কালচার কৃষ্টি সংস্কৃতি কাকে বলে জানেন না। আর মা তো কেবল সেকরা আর গহনা আর গোছা গোছা পান আর জরদা-সুরতি নিয়েই আছেন। বাবা, তুমি তোমার ওই সেকেলে ঝোলা গোঁফটা কামিয়ে ফেল, চুল ব্যাক-ব্রশ করতে শেখ। এখনও তো তেমন বুড়ো হও নি, একটু স্মার্ট হও। আর মা, তোমার দাঁতের দিকে তো চাওয়া যায় না, পান-দোক্তা খেয়ে আতা-বিচির মতন কালো করেছ। সব তুলে ফেলে নতুন দাঁত বাঁধাও। আর তো বাবার কাজের চাপ নেই, এখন তোমরা দুজনে চালচলন বদলাও, সভ্য সমাজে যাতে মিশতে পার তার চেষ্টা কর।

 বেচারাম আর সুবালা অতি সুবোধ বাপ-মা। ছেলেমেয়ের কথা