পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
আনন্দীবাঈ ইত্যাদি

 —পাঠকরা রাগ করে না?

 —রাগ করবে কেন। নামী লোকের নিন্দে সকলেরই ভাল লাগে। সেকালে যে সব পত্রিকা রবীন্দ্রনাথকে আক্রমণ করত তাদের বিস্তর পাঠক জুটত। কবির ভক্তরাও পড়ে বলত, হে হে হে, কি মজার লিখেছে দেখ! তবে কালাচাঁদ চোঙদারের একটা প্রিনসিপ্‌ল আছে, ছোটখাটো লেখকদের গ্রাহ্য করে না, আর যে সব বড় বড় লেখক নিয়মিত বার্ষিক বৃত্তি দেন তাঁদেরও রেহাই দেয়।

 —বার্ষিক বৃত্তি কি রকম? ব্ল্যাকমেল নাকি?

 —তা বলতে পার। শুনেছি দামোদর নশকর প্রতি বৎসর পূজোর সময় কালাচাঁদকে আড়াই শ টাকা দেন। উনি যে গল্পসরস্বতী উপাধি পেয়েছেন তা কালাচাঁদেরই চেষ্টায়। বটেশ্বর সিকদার একগুঁয়ে কঞ্জুস লোক, এক পয়সা দেন না, তাই দুন্দভির প্রতি সংখ্যায় তাঁকে গালাগাল খেতে হয়। তবে কালাচাঁদ উপকারও করে। জন তিন-চার ছোকরা কতকগুলো অশ্লীল বই লিখেছিল, কিন্তু তেমন কাটতি হয় নি। তারা কালাচাঁদকে বলল, দয়া করে আপনার পত্রিকায় আমাদের ভাল করে গালাগাল দিন, আমাদের লেখা থেকে চয়েস প্যাসেজ কিছু কিছু তুলে দিন। বেশী দেবার সামর্থ্য আমাদের নেই, পঞ্চাশ টাকা দিচ্ছি, তাই নিন সার। কালাচাঁদ রাজী হল, তার ফলে সেই বইগুলোর কাটতি খুব বেড়ে গেল। তার পর গিয়ে দামামা পত্রিকার সম্পাদক গোরাচাঁদ সাঁপুইকেও বলতে হবে। সে ছোকরা ব্ল্যাকমেল নেয় না, তবে বড়লোক লেখকদের টাকা খেয়ে তাদের রাবিশ রচনার প্রশংসা ছাপে, তা ছাড়া প্রতি সংখ্যায় কালাচাঁদকে চুটিয়ে গাল দেয়। যাক ও সব কথা। আমি কালকেই ফর্দ করে ফেলব—কাদের ডাকতে হবে, কি খাওয়ানো হবে, বসবার কি রকম ব্যবস্থা হবে—সবই স্থির করে ফেলব।