পাতা:আনন্দীবাঈ ইত্যাদি গল্প - পরশুরাম (১৯৫৭).pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কাশীনাথের জন্মান্তর

প্রায় দেড় শ বৎসর আগেকার কথা। তখন কলকাতার বাঙালী হিন্দু সমাজে নানারকম পরিবর্তন আরম্ভ হয়েছে কিন্তু তার কোনও লক্ষণ রাঘবপুর গ্রামে দেখা দেয় নি। কাশীনাথ সার্বভৌম সেই গ্রামের সমাজপতি, দিগ্‌গজ পণ্ডিত, যেমন তাঁর শাস্ত্রজ্ঞান তেমনি বিষয়বুদ্ধি। তাঁর সন্তানরা কলকাতা হুগলি বর্ধমান কৃষ্ণনগর মুরশিদাবাদ প্রভৃতি নানা স্থানে ছড়িয়ে আছে, কিন্তু তিনি নিজে তাঁর গ্রামেই থাকেন, জমিদারি দেখেন, তেজারতি আর দেবসেবা করেন, একটি চতুষ্পাঠীরও ব্যয় নির্বাহ করেন।

 একদিন শেষরাত্রে তিনি স্বপ্ন দেখলেন, তাঁর ইষ্টদেবী কালীমাতা আবির্ভূত হয়ে বলছেন, বৎস কাশীনাথ, তোমার বয়স শত বর্ষ অতিক্রম করেছে, তুমি সুদীর্ঘকাল ইহলোকের সুখদুঃখ ভোগ করেছ। আর কেন, এখন দেহরক্ষা কর।

 কাশীনাথ বললেন, মা কৈবল্যদায়িনী, এখন তো মরতে পারব না। আমার জাজ্বল্যমান সংসার, চতুর্থ পক্ষের স্ত্রী এখনও বেঁচে আছেন। আঠারোটি পুত্রকন্যা, এক শ পঁচিশটি পৌত্র পৌত্রী দৌহিত্র দৌহিত্রী। প্রপৌত্র প্রদৌহিত্র প্রভৃতি বোধ হয় হাজার খানিক জন্মেছিল, তাদের অনেকে মরেছে কিন্তু এখনও প্রচুর জীবিত আছে। তা ছাড়া বিস্তর শিষ্য আমার চতুষ্পাঠীতে পড়ে, আমি তাঁদের পালন ও অধ্যাপনা করি। এই সব স্নেহভাজনদের ত্যাগ করা অতীব কষ্টকর। তোমার জন্য একটি বৃহৎ মন্দির নির্মাণের সংকল্প করেছি, তাও উদ্‌যাপন করতে হবে। কলকাতার কিরিস্তানী অনাচার যদি এই গ্রামে প্রবেশ করে