পাতা:আনন্দী বাঈ - সখারাম গণেশ দেউস্কর.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় অধ্যায়
৩১

কষ্টের কথা স্মরণ করিয়া তিনি কয়েকবার বিচলিতা হইয়াছিলেন। কিন্তু ভগবানের করুণায় দৃঢ় বিশ্বাস ও কর্ত্তব্য-পালনে অটল বাসনা-বশতঃ তিনি চিরপোষিত সংকল্পের পরিহার করিলেন না। এই বিষয়ে শ্রীমতী কার্পেণ্টারকে তিনি যে সকল পত্র লিখিয়াছিলেন, তাহাতে তাঁহার পতি-বিচ্ছেদ-সম্ভাবনায় উদ্বেগ, স্বামীর অর্থাভাবের জন্য দুঃখ প্রকাশ, তাঁহার আমেরিকা গমনে আত্মীয় বন্ধুগণের আপত্তি ও তাঁহার পাতিব্রত্যনাশের আশঙ্কা, তাঁহার দৃঢ়-চিত্ততা, স্বদেশ-ভগিনীগণের কল্যাণ-সাধনে উৎসাহ প্রভৃতি বিবিধ বিষয়ের চিত্র দেখিতে পাওয়া যায়। একখানি পত্রে তিনি স্বীয় শেষ সিদ্ধান্ত এইরূপে ব্যক্ত করিয়াছেন,—

 “আমি প্রতিজ্ঞা করিয়াছি যে, যে কার্য্যের জন্য আমেরিকা যাইতেছি, তাহা যদি সুসিদ্ধ হয়, তাহা হইলেই আমি স্বদেশে প্রত্যাবৃত্ত হইব। যদি অকৃতকার্য্য হই, তবে ভারতে আর কাহাকেও মুখ দেখাইব না। প্রাচীন কালের হিন্দুরমণীগণ কিরূপ বুদ্ধিমতী, শৌর্য্যশালিনী ও পরোপকার-পরায়ণা ছিলেন, তাহা আমি জানি। সেই বংশে জন্মগ্রহণ করিয়া আমি তাঁহাদিগের নাম কখনই কলঙ্কিত করিব না। যেরূপে হউক, আমি স্বীয় কর্ত্তব্য-পালন করিব। আমার বিশ্বাস, কেহ আমার অনিষ্ট-সাধন করিতে পারিবে না। কারণ, একমাত্র ঈশ্বর ভিন্ন কেহ কাহারও ইষ্টানিষ্ট-সাধন করিতে পারে না। আমরা সকলেই যখন পরমেশ্বরের সন্তান, তখন কেন আমি বিপন্ন হইব? আমাকে আমার কর্ত্তব্যপালন করিতেই হইবে। “মন্ত্রের সাধন কিম্বা শরীর পাতন।”