পাতা:আনন্দী বাঈ - সখারাম গণেশ দেউস্কর.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
তৃতীয় অধ্যায়
৩৭

দেশীয় কাপড়, মারাঠী সাড়ী ও উৎকৃষ্ট দেশীয় সিন্দূর প্রভৃতি সঙ্গে লইলেন। আনন্দী বাঈ বৈদেশীক দ্রব্য-ব্যবহারের ঘোর বিরোধিনী ছিলেন। এই কারণে তাঁহাকে তিন বৎসর ব্যবহারের উপযোগী সমস্ত দ্রব্য এখান হইতে লইয়া যাইতে হইয়াছিল। আমেরিকায় এখানকার অপেক্ষা শীতের প্রকোপ অধিক। শুদ্ধ কঞ্চুলিকা দ্বারা তথায় শীত নিবারিত হইবার সম্ভাবনা নাই দেখিয়া আনন্দী বাঈ জামা প্রস্তুত করিবার জন্য পশ্চিমাঞ্চলের “ধোসা” প্রভৃতির ন্যায় অতি কর্কশ ঊর্ণ বস্ত্রাদি বহু পরিমাণে ক্রয় করিয়াছিলেন। আমেরিকাবাসীকে দেখাইবার জন্য তিনি রামচন্দ্র, শঙ্কর, পার্ব্বতী প্রভৃতি দেবদেবীর চিত্রাদিও সঙ্গে লইয়াছিলেন। ফলতঃ, তাঁহার আমেরিকা-গমনে বর্ত্তমানকালের তামসিকতা বা বিলাসিতার লেশ মাত্র ছিল না। তিনি আশ্রমচারিণী তপস্বিনী ঋষি-কন্যার ন্যায় জ্ঞানাকাঙ্ক্ষিণী হইয়া অতি পবিত্রভাবে খৃষ্ট রাজ্য আমেরিকায় গমন করিয়াছিলেন। যৌবনে চিত্তের এরূপ সংযম অধুনা বড় দুর্লভ।

 ৬ই এপ্রিল রাত্রি ১১টা পর্যন্ত যাত্রার সমস্ত আয়োজন শেষ করিয়া আনন্দী বাঈ সমস্ত দিবসের পরিশ্রমের পর শয্যাগতা হইলেন। সে রজনীতে গোপাল রাওয়ের নিদ্রাকর্ষণ হইল না। সপ্তদশবর্ষীয়া যুবতী স্ত্রীকে দেশের ও তাহার নিজের মঙ্গলের জন্য সমুদ্র পারে নির্বাসিত করিতে প্রবৃত্ত হইয়া তিনি ভাল কি মন্দ কার্য্য করিতেছেন, তাঁহার হৃদয়ের স্নেহ-সর্বস্ব দান করিয়া তিনি যাহাকে এতদিন পালিত ও বর্দ্ধিত করিয়াছেন, অপরিচিত দূর দেশে কে তাহার রক্ষণাবেক্ষণ করিবে, তিনিই বা কিরূপে প্রিয়তমার বিরহে