পাতা:আনন্দী বাঈ - সখারাম গণেশ দেউস্কর.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
আনন্দী বাঈ

একাকী কালযাপন করিতে পারিবেন প্রভৃতি বিবিধ চিন্তায় সমস্ত রাত্রি তাহার মস্তিষ্ক ঘূর্ণ্যমান হইতেছিল।

 সমীপবর্ত্তী গির্জার ঘড়িতে ঢঙ্‌ ঢঙ্‌ ঢঙ্‌ করিয়া তিনটা রাজিবামাত্র গোপাল রাও সহধর্ম্মিণীর নিদ্রাভঙ্গ করিয়া তাঁহাকে যাত্রার জন্য প্রস্তুত হইতে বলিলেন। আনন্দী বাঈ শয্যার উপর উঠিয়া বসিবামাত্র প্রবল শোকাবেগে গোপাল রাওয়ের কণ্ঠ-রোধ হইল। মুহূর্ত্ত পরে প্রিয়তম স্বামীর ও মাতৃকল্পা জন্মভূমির শান্তিস্নিগ্ধ ক্রোড় হইতে বহুদূরে নির্ব্বাসিত হইতে হইবে ভাবিয়া আনন্দী বাঈ উদ্বেলচিত্ত হইলেন। তাঁহারও কথা কহিবার শক্তিমাত্র রহিল না। তিনি শোক-গম্ভীর চিত্তে আত্মীয় বন্ধুগণকে অভিবাদন করিয়া স্বামীর সহিত শকটারোহণে বন্দর অভিমুখে যাত্রা করিলেন। পথি-মধ্যে উভয়েরই নিস্পন্দ দৃষ্টি পরস্পরের মুখমণ্ডলের প্রতি নিবদ্ধ ছিল। তাঁহাদের মধ্যে কেহই বিদায়সম্ভাষণের জন্য বাক্যস্ফুর্তি করিতে পারিলেন না।

 বন্দরে উপস্থিত হইয়া আনন্দী বাঈ ষ্টীমারে আরোহণ করিলেন। শ্রীমতী জন্সনের হস্তে স্বীয় পত্নীকে সমর্পণ করিয়া গোপাল রাও বলিলেন, “স্বল্প ব্যয়ে অথচ যথাসম্ভব সুখস্বাচ্ছন্দ্যের সহিত যাহাতে আমার স্ত্রী আমেরিকায় পৌঁছিতে পারেন, আপনি তাহার চেষ্টা করিলে আমি সুখী হইব।” এই কথা শুনিয়া জন্সন সাহেব অতীব উদ্ধতভাবে উত্তর করিলেন,—“তাহা হইতে পারে না। আমার স্ত্রীর সহিত থাকিলে তোমার স্ত্রীকে আমার স্ত্রীর তুল্য অর্থব্যয় করিতে হইবে!” এই উত্তরে গোপাল রাও বজ্রাহত