পাতা:আনন্দী বাঈ - সখারাম গণেশ দেউস্কর.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চতুর্থ অধ্যায়
৪৯

হইয়াছিলেন। তাঁহার সদানন্দ ভাবও ইহার অন্যতম কারণ বলিয়া বিবেচিত হইতে পারে। কি পাঠাভ্যাসের সময়ে, কি গৃহস্থালীর কার্য্যে, সব বিষয়েই তাঁহার সদা-প্রফুল্ল-ভাব দেখিয়া শ্রীমতী কার্পেণ্টার এতদূর মুগ্ধ হইয়াছিলেন যে, তিনি তাহাকে “আনন্দ-নির্ঝরিণী” আখ্যা প্রদান করিয়াছিলেন।

 কিন্তু এই দেব-কন্যা-রূপিণী আনন্দ-নির্ঝরিণীও সময়ে সময়ে শোকের আবিল তরঙ্গে বিক্ষোভিত হইত। ভারতবর্ষের ডাক আসিবার সময় নিকটবর্ত্তী হইলে অথবা গোপাল রাওয়ের পত্র পাইতে বিলম্ব ঘটিলে আনন্দী বাঈর মুখে উদ্বেগ ও উদাসীনতার ছায়া পরিদৃষ্ট হইত। তিনি একটী পত্রে গোপাল রাওকে লিখিয়াছেন,—“অন্য কার্য্যে লিপ্ত থাকিলেও একটী বিষয়েই আমার মন সর্ব্বদা সংযুক্ত থাকে। আপনার চিন্তায় (ধ্যানে) আমি অধিকাংশ সময় আনন্দ উল্লাসে যাপন করি; কিন্তু যখন আমাদের উভয়ের মধ্যগত দূরত্বের বিষয় মনে উদিত হয়, তখন হৃদয়-নৈরাশ্যসাগরে মগ্ন হইয়া যায়। আমি যথাসাধ্য নিজের মনোভাব গোপন করিবার চেষ্টা করি, তথাপি মুখে বিষাদের ভাষা প্রকাশিত হইয়া পড়ে বলিয়া আমার মনে হয়। প্রথমে প্রথমে আমার রোদনোচ্ছ্বাস বৃদ্ধি পাইত, কিন্তু আমি প্রতিজ্ঞাপূর্ব্বক এপর্য্যন্ত কাহাকেও আমার অশ্রু দেখিতে দিই নাই। এখন আর প্রায় চক্ষে জল আসে না, দুঃখবেগ অসহ্য হইলে কেবল জিহ্বা ও কণ্ঠ শুষ্ক হয়, হৃদয় অব্যক্ত যন্ত্রণার ভারে মথিত হইয়া যায়। কিন্তু পাছে কেহ জানিতে পারে, এই ভয়ে আমি দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া