পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আফগানিস্থান ভ্রমণ
১০১

হিন্দুর। আমি মন্দির হতে বহিষ্কৃত হতে চলেছিলাম, কিন্তু রাজানুগ্রহে সেই আসামাই মন্দিরে বিগ্রহের মতই অচলভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাস করবার অধিকার পেলাম। পূজারী যখন দেখল, বৈদেশিক সচিবের আফিস হতে লোক এসে আমার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের তত্ত্বাবধান করছে, এবং জনরব রটেছে, হয়ত রাজা জাহির শা একদিন আমাকে নিমন্ত্রণ করবেন, তখন পুরোহিত ধরে নিল আমি একটা যে-সে লোক নই, নিশ্চয় উচ্চস্তরের লোক।

 লোকে দেবতার পূজা করে না, পূজা করে দেবতারূপী ভয়কে। ভক্তি হ’ল ভয়ের একটা অংগ। ভক্তিভরে পাথরের দেবতার চরণসেবা করি কেন? অন্তিমে সুখশান্তি পাব বলেই। পেছনে রয়েছে নরকের সেই চিত্র দেখিয়ে দেয় স্বর্গের সুখশাস্তি। কল্পিত নরক যদি না সৃষ্টি করা হত, তবে কল্পনায় স্বর্গের সৃষ্টিও মানুষের দ্বারা হত না। হয়তো পূজারী ঠাকুরের কাছে মূর্তিমান নারকীয় জীব বলেই প্রতিপয় হয়েছিলাম, কিন্তু আমার সহায় ছিল রাজানুগ্রহ। সেজন্যই পূজারী আমার প্রতি মনে মনে ঘৃণার ভাব পোষণ করলেও বাইরে দেবতার মতই ভক্তি প্রদর্শন করতে বাধ্য হলেন।

 প্রধান মন্ত্রী শুধু থাকবার ব্যবস্থা করলেন না, আর্থিক দুর্গতিরও অবসান ঘটালেন। এতে আমার লাভ হ’ল প্রচুর। এখানে পেট ভরাবার জন্য আসি নি, এসেছি কাবুল শহর দেখতে। কাবুলের কথা ভারতের লোক অতি অল্পই অবগত আছে। যতটুকু জানবার সুবিধা হয় ততটুকুই জেনে নিতে হবে।

 পরদিন যখন বের হব, এমন সময় পূজারী বললেন, “আপনার একাকী পথে বের হওয়া উচিত হবে না, সংগে লোক থাকা সমীচীন। লোৰু সংগে থাকলে সর্বসাধারণ আপনাকে সম্মান প্রদর্শন করবে।” পূজারীকে বললাম, “আমার লোকের দরকার নেই। ভাবলাম, আমার আবার ইজ্জত! আমার দেশ পরাধীন, আমরা দাসখত লিখে দিয়েছি। এরূপ পরাধীন জাতের লোকের