পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৬
আফগানিস্থান ভ্রমণ

এবং জোতদারের পর হ’ল চাষার স্থান। চাষা জানে শুধু জোতদারকেই। বাংলা দেশের শিক্ষা এবং গণজাগরণের সংগে আফগানিস্থানের গণজাগরণের তুলনা হতে পারে না। গণজাগরণের হিসাবে বাংলা দেশ আফগানিস্থানের বহু উচ্চ স্থান দখল করে ছিল। আফগানিস্থান স্বাধীন আর ভারতবর্ষ ছিল পরাধীন। বাংলা দেশ ভারতবর্ষের একটা অংশমাত্র। বাংগালী শিক্ষিত হয়েও বাংলা দেশের সংবাদ রাখে না। কিন্তু শিক্ষার হিসাবে কাবুলীরা আমাদের অনেক পেছনে থাকা সত্বেও এদের বৈশিষ্ট্য থাকায়, ভারতীয় কৃষকের মত পাঠান কৃষক জোতদারের হাতে কাবু হয়ে পড়ে নি। পাঠান বোঝে খাজনা দিতেই হবে; অতএব ন্যায্য খাজনা তুমি রাজা স্বয়ং এসে নাও কিংবা একটা বাঁদরের গলায় থলি বেঁধেই পাঠিয়ে দাও, খাজনা পেয়ে যাবে। কিন্তু পাঠান চাষা অন্যায়কে কখনও প্রশ্রয় দেয় না। নায়েববাবু, পেয়াদাবাবু, কেরানিবাবু,পুলিশবাবু—এসবের ধার ধারে না, অন্যায় করেছ কি মরেছি।—অটোমেটিক মেশিনগান চালিয়ে প্রতিকার করবে ঐ দরিদ্র চাষা। সে জীবনের ভয় করে না। আর্ম এক্ট কাকে বলে তা সে জানে না। আর্ম এক্ট আফগানিস্থানে চলে না। যেখানে আর্ম এক্ট নেই, সেখানে আর্ম-এর অপব্যবহারও হয় না।

 যেখানে লোকের চলতি পথে স্বাধীনতা আছে, সেখানে লোকে রাজতন্ত্র, প্রজাতন্ত্র, গণতন্ত্র-এসব নিয়ে বেশি মাথা ঘামায় না। পাঠানরা স্বাধীন, তাদের মাথা ঘামাতে হয় না, দুরানী বংশ রাজা হ’ল, কি খিলজাই বংশের লোক রাজা হ’ল। তারা কখনও ভাবে না সরকারী চাকুরি কে পেল আর কে না পেল। তাদের আত্মরক্ষা করার জন্য তলোয়ার, বন্দুক, পিস্তল, অটোমেটিক মেশিনগান রয়েছে, সেজন্যই সে কাউকে ভয় করে না। নিজের পরিবার, গ্রাম, এমন কি ছোট ছোট সম্প্রদায় ও গোষ্ঠী পর্যন্ত নিজেরাই নিজেদের দেখাশুনা করে থাকে। রাজার পেয়াদা অথবা চাকর গ্রামের মালিকের কাছে হাজির হয়ে রাজকীয় আদেশ জানিয়ে আসে। গ্রামের মালিক সবাইকে ডেকে