পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আফগানিস্থান ভ্রমণ
১৩৩

বরফ হতে মুক্ত করে আবার চলতে লাগলাম। এরূপ ভাবে চলার জন্য ঘণ্টায় পনের মাইলের বেশি আমরা এগুতে পারছিলাম না।

 বিকালের দিকে আমরা ছোট একখানি গ্রামে পৌঁছলাম। এবার আমরা কোনও সরাই-এ না গিয়ে একজন গৃহস্থের বাড়ীতে অতিথি হলাম। গৃহস্থ বড়ই দয়ালু। তিনি আমাদের সাদর সম্ভাষণ জানালেন। উত্তম খাদ্য দিলেন। শোবার জন্য প্রত্যেককে গরম বিছানা দিলেন। খাওয়া শেষ করে গরম বিছানায় আরাম করে বসবার পর গৃহস্বামী বললেন, এ পথ দিয়েই একজন ভারতীয় মোটর ড্রাইভার গজনী যাবার পথে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিলেন। জল এবং পেট্রোলের অভাবেই তাঁর মৃত্যু হয়। বরফপাত শুরু হবার কয়েক দিন পর ঐ মটর ড্রাইভার কাবুল হতে গজনীর দিকে রওয়ানা হয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন পথে জলের অভাব হবে না। কিন্তু পথ ঘাট ভাল রকম জানা না থাকায় জলের সন্ধান পান নি। পেট্রোলের উপর নির্ভর করেই তিনি অনেক পথ এগিয়ে যান। শেষটায় পেট্রোলও যখন ফুরিয়ে গেল তখন মোটর আপনিই বন্ধ হয়। মোটরের ভেতর নিরাপদ স্থান না থাকায় এবং আত্মরক্ষার কোন ব্যবস্থা ছিল না বলে রাত্রে যখন নেকড়ে বাঘের দল তাঁকে আক্রমণ করল তখন তিনি প্রাণ রক্ষা করতে পারলেন না। নেকড়ের দল শুধু রেখে গিয়েছিল তাঁর ছিন্ন বস্ত্র। ড্রাইভার যে ভারতবাসী ছিলেন তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল চারিদিকে ছড়ানো পাশপোর্টের পাতা দেখে। অতঃপর গৃহস্বামী দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন “আফগানিস্থান সুখ এবং দুঃখে পরিপূর্ণ। এখনও এদেশে সভ্যতার আওতা পুরোপুরি ভাবে আসে নি। রাজা আমানউল্লা সেজন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। দেশ বিদেশের পুঁজিবাদীদের তা সহ্য হল না। তাদের অপচেষ্টার ফলে আজ হতভাগ্য ভারতীয় মোটর ড্রাইভারের অপমৃত্যু ঘটল। আমানউল্লা যদি তাঁর নির্ধারিত মতে রাস্তা তৈরীর কাজ করে যেতে পারতেন তবে প্রত্যেক বারো মাইল অন্তর একটি করে সরাই থাকত। কিন্তু তা হল না। আমানউল্লা চিরতয়ে দেশ পরিত্যাগ করতে বাধ্য হলেন।”