পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৮
আফগানিস্থান ভ্রমণ

 পরদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর মনে হল পায়ে ব্যথা আর নেই। আনন্দে বিছানা হতে নেমেই পোশাক-পরিচ্ছদ পরে সুলতান মামুদের কবর এবং অন্যান্য দ্রষ্টব্য দেখতে বের হয়ে পড়লাম। সুন্দর শাদা বরফের ওপর প্রভাত-সূর্যের আরক্ত রশ্মিমালা পড়ে চোখ ঝলসে দিচ্ছিল। রংগিন চশমা থাকায় সেই চোখ ঝলসানো সূর্যালোক আমার সৌন্দর্য উপভোগে ব্যাঘাত জন্মাতে পারছিল না। আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে একজন লোক সংগে নিয়ে চারিদিকে ঘুরে বেড়াতে আরম্ভ করলাম।

 অনেকগুলি পুরাতন ইটের স্তূপ, ভাংগাচোরা পাথর এবং স্থানে স্থানে ইমারতের ভগ্নাবশেষ দেখে মনে হল একদিন যা পরম যত্নে নৈপুণ্য সহকারে গড়া হয়েছিল তাই আর একদিন সময়ের পরিবর্তনে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। আজ যা ভাল কাল তা মন্দ। আজ যিনি পূজিত কাল তিনি অবহেলিত। পুরাতন চিরকালই নূতনকে পথ ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছে। আমি নূতনকে ভালবাসি। পুরান ধ্বংস হয়েছে বলে আমার মনে কোন দুঃখ ছিল না। যে শিবমন্দিরে হয়তো মুষ্টিমেয় কয়েকজন উপাসনা করত আজ সেস্থানে বিরাট মসজিদ সৃষ্টি হয়েছে। সহস্র সহস্র লোক সেখানে সেই ঈপ্সিত পরমারাধ্যেরই নাম উচ্চারণ করছে। ধর্মের সংকীর্ণ গণ্ডী ঘুচে গিয়েছে, তার পটভূমি হয়েছে বিরাট। পরিবর্তনকে এই দৃষ্টিভঙ্গী দিয়েই বিচার করি। কোনো বিষয়েই সংকীর্ণতা আমার অন্তরের সমর্থন লাভ করে না। এটাও জানি অবতারবাদ চিরস্থায়ী নয়।

 পাহাড়ের ওপর আছে একটি প্রকাণ্ড সমতল ভূমি। তারই ওপর পুরাতন একটা স্তম্ভ। স্তম্ভটি সুলতান মামুদ তাঁর জয়ের স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ গড়েছিলেন। যুক্ত গাত্রে চিত্রকলার বহু নিদর্শন ছিল। চিত্র দেখে প্রাচীন দ্রাবিড় যুগের বলেই মনে হচ্ছিল। আরব সভ্যতার কোন ছাপ তাতে ছিল না। স্তম্ভটি দেখে মনে হল উন্নত শীর্ষে দাঁড়িয়ে থেকে এটি জয়ের বার্তাই ঘোষণা করছে। হাঁ করে দাঁড়িয়ে যখন সুলতান মামুদের কীর্তিস্তম্ভ দেখছিলাম তখন একজন পাঠান বিশুদ্ধ