পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আফগানিস্থান ভ্রমণ
২১

 আমার উদ্ধারকর্তা পাঠান খিলজাই গোষ্ঠীর। খিলজাইরা বড়ই অতিথি পরায়ণ, কিন্তু প্রথমত তাঁর আতিথ্য গ্রহণ করতে রাজী হইনি। ভাবছিলাম জালালাবাদ অতি সন্নিকট, সেজন্য তাঁকে বলছিলাম আজই জালালাবাদে পৌঁছানো দরকার। পাঠান হেসে বললেন, আজ কেন—আগামীকল্যও জালালাবাদে পৌঁছানো সম্ভব হবে না, অতএব চলুন আমার বাড়ীতেই।

 আমার কাছে আফগানিস্থানের ছোট একখানা মানচিত্র ছিল। তা দেখে বুঝতে পারিনি জালালাবাদ কত দূর; তাই অগত্যা পাঠানের বাড়ী অতিথি হলাম। পাঠানের বাড়ী নিকটস্থ একটি ছোট গ্রামে। ভাবছিলাম গ্রাম কাছেই। কিন্তু গ্রাম ছিল বেশ দূরে এবং পাহাড়ের অন্তরালে। পথের পাশে গ্রাম করে সেখানে বাস করা এদের অভ্যাস নেই। গ্রাম্যপথে সাইকেল নিয়ে চলাফেরা করা বড়ই কষ্টকর কাজ। পাঠানের যদিও কষ্ট হচ্ছিল না, আমার কিন্তু ঘাম বেরিয়ে গিয়েছিল।

 পাঠান ধনী নন্, অবস্থা অসচ্ছলও নয়। তাঁর ফলের বাগান ও ঘাসের জমি পরিমাণে খুব কম নয় বলেই মনে হ’ল। পাঠান বিবাহিত। বাড়ীতে আর একটি যুবককে দেখে ভেবেছিলাম, এই লোকটি হয়ত গৃহস্বামীর ছোট ভাই হবে; কিন্তু সেই লোকটি একজন জায়গীরদার মাত্র। জায়গীরদার মানে হ’ল, যে শুধু খায়, থাকে এবং বাড়ীর কাজকর্ম দেখাশোনা করে। আফগানিস্থানে জায়গীরদার হওয়ার সম্মানের বিষয় নয়—সকল সময়ই মাথা নত করে থাকতে হয়। এজন্য পারতপক্ষে কেহ জায়গীরদার হতে রাজী হয় না। জায়গীরদার পৃথক একটা কামরায় থাকেন। অতিথি-অভ্যাগত এলে জায়গীরদার নিজের ঘর ছেড়ে চলে যান না, তার ঘরেই অতিথির থাকবার বন্দোবস্ত হয় এবং তিনিই অতিথির আদর-যত্ন করেন।

 আমার যাবার আধ ঘণ্টা পরেই জায়গীরদার হাতমুখ ধোওয়ার জল দিলেন। একখানা ভাল কার্পেটের ওপর সাদা চাদর বিছিয়ে খাবারের জায়গা করলেন।