পাতা:আফগানিস্থান ভ্রমণ.djvu/৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০
আফগানিস্থান ভ্রমণ

 —তবুও কত দূর?

 —আমি জানি না।

 এই বলেই তিনি বিদায় নিলেন। বৈদেশিক সচিবের উক্তিতে একটুও দুঃখ হই নি, জানতাম এখানকার বৈদেশিক সচিব প্রধান মন্ত্রীর আজ্ঞাবাহী ভৃত্য মাত্র। তবুও অবনত মস্তকে যখন মন্দিরে ফিরে যাচ্ছিলাম তখন কাবুল হোটেলের বয় ডেকে বললে, ওপরে এজন হিন্দু আমাকে ডাকছেন। হোটেলের ওপর উঠবার সময় হোটেলের জাঁকজমক লক্ষ্য করলাম। দারোয়ানকে কোন মতেই বুঝতে দিই নি আমি এসব লক্ষ্য করছি।

 দুদিকে সারি দিয়ে বড় বড় রুম। ঠিক মধ্যস্থল দিয়ে পথ। ঘরের দোতলায় কাঠের মেঝে কিন্তু বেশ পরিষ্কার, তারই ওপর দামী কারপেট বিছানো। কারপেটে নানারূপ ফুল আঁকা। এই বিচিত্র কারুকার্যমণ্ডিত কার্পেটের সৌন্দর্য অবলোকন করে এই কথাটাই আমার মনে জাগল যে দরিদ্র শিল্পীর অক্লান্ত পরিশ্রমে এটি নির্মিত হয়েছে সে তার মজুরি ঠিকমত পায়নি। ফুলদানিটিও বেশ পরিপাটি করে সাজানো। বেশি আর লক্ষ্য করতে পারলাম না, একজন পাঞ্জাবী ভদ্রলোক বাইরে এসে আমার করমর্দন করে তাদের রুমের ভেতর নিয়ে চললেন।

 “আপনি নিশ্চয়ই ভারতবাসী। মাথায় আপনার শোলার হ্যাট, পরনে ইউরোপীয় পোশাক, আপনি বেপরোয়া হয়ে পথ চলছেন। পাঠানরা আপনাকে কিছুই বলছে না কিন্তু আমরা তা পারি না। মোটরে আসতেই আমাদের বিপদ হয়েছিল।” জিজ্ঞাসা করে জানলাম তাঁদের বিপদটা আর কিছুই নয়, মোটর ড্রাইভার একবার মোটর থামিয়ে জংগলে গিয়েছিল, ইত্যবসরে এক বন্দুকধারী পাঠান তার বন্দুক তাঁদের কাছে বিক্রি করতে চাইছিল। বন্দুক তাঁরা কিনেন নি, উপরক্ত বন্দুকবিক্রেতাকে ডাকাত, আফ্রিদী, গলাকাটা এসব মারাত্মক বিশেষণে ভূষিত করে বিদায় করে দিয়ে কোনো মতে পৈতৃক প্রাণ নিয়ে কাবুলে এসেছেন। তাদের বিপদের কথা শুনে বৈদেশিক সচিবের নিকট অপমানের গ্লানিটা অনেক