পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ১০ ]

বুদ্ধিতে প্রতিভাত হয় না। তাঁহাদের হিতৈষিতা থাকিতে পারে, ভূয়োদর্শন থাকিতে পারে, কার্য্যপটুতা থাকিতে পারে, কিন্তু একমাত্র বৈষম্যবুদ্ধির বিপত্তিপূর্ণ তরঙ্গাঘাতে, তৎসমুদয়ই বিজাতীয় ভাবের অতল সাগরে নিমজ্জিত হইয়া গিয়াছে।

 শ্রদ্ধাস্পদ শ্রীযুত রাজনারায়ণ বসু, তাঁঁহার “একাল আর সেকাল” নামক উপদেশপূর্ণ গ্রন্থে এ বিষয়ে যাহা লিখিয়াছেন, আমি এই স্থলে তাহা উদ্ধৃত করিতেছিঃ—“আমরা সকল বিষয়েই সাহেবদের অনুকরণ করিতে ভালবাসি, কিন্তু বিবেচনা করি না যে, সে অনুকরণ আমাদের দেশের উপযোগী কি না, আর তদ্দ্বারা আমাদের দেশের প্রকৃত উপকার সাধিত হইবে কি না? সাহেবেরা পর্য্যন্ত, যে সাহেবী প্রথা এদেশের উপযোগী নহে, মনে করেন, তাহাও আমরা অবলম্বন করিতে সঙ্কুচিত হই না। সাহেবেরা নিজে বলিয়া থাকেন, সাহেবী পোশাক কোনও মতে এদেশের উপযুক্ত নয়; কিন্তু আমাদের দেশের কোনও কোনও ব্যক্তি ঐ পোশাক ব্যবহার করিতে সঙ্কুচিত হয়েন না। আমাদের দেশের কোনও বিখ্যাত ব্যক্তি ভূতপূর্ব্ব লেপ্‌টেনেণ্ট গবর্ণর বীডন সাহেবের সহিত ধুতি চাদর পরিয়া দেখা করিতে যাইতেন। তাহাতে গবর্ণর সাহেব বিরক্তি প্রকাশ করিতেন। একবার গ্রীষ্মের সময় দেখা করিতে গিয়াছেন, গিয়া দেখেন যে, গবর্ণর সাহেব ঢিলে পাজামা ও পাতলা কামিজ পরিয়া বসিয়া আছেন। আমাদের বন্ধুকে দেখিবামাত্র তিনি বলিলেন, ‘তোমাকে দেখিয়া আমার হিংসা হচ্ছে, ইচ্ছা করে তোমাদের ন্যায় পরিচ্ছদ পরিয়া থাকি।’ আমাদের বন্ধু উত্তর করিলেন, ‘তাই কেন করুন না?’ রীডন সাহেব বলিলেন, ‘ওরূপ পরিচ্ছদ পরিধান করা আমাদের দেশাচারবিরুদ্ধ, সুতরাং কেমন করিয়া করি।’ আমাদের বন্ধু উত্তর করিলেন, ‘আপনাদের বেলা দেশাচার বলবৎ, আর আমাদের বেলা কিছুই নহে, আপনারা এরূপ