পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ১৫ ]

ছড়াছড়ি হয়। স্বদেশীয় পত্র লিখিতে, যে স্থলে স্বদেশীয়কে ভাষার ব্যবহার করিলে চলে, সে স্থলে বিদেশীয় ভাষার আশ্রয় গ্রহণ করা জাতীয়গৌরবের লক্ষণ নয়। অনেকে আবার আপনাদের নাম পর্য্যন্ত ইঙ্গরেজের নামের আকারে পরিণত করিয়াছেন। তাঁহারা ধুতি চাদর ছাড়িয়া হ্যাট কোট ধরিয়াছেন। সুতরাং হেমেন্দ্রনাথ মিত্রও এক্ষণে H. N. Mitterএ পরিণত হইয়াছেন। জাতীয়ভাবেব অধোগতি এইরূপে আমাদের প্রতি কার্য্যে পরিস্ফুট হইতেছে। বিজাতীয় শিক্ষা, যেমন আমাদিগকে ধীরে ধীরে বিজাতীয়ভাবে সংগঠিত করিতেছে, বিজাতীয় পদ্ধতি সেইরূপ আমাদের অন্তঃপুরচারিণী মহিলাদিগকেও বিজাতীয়ভাবে পরিণত করিয়া তুলিতেছে। অবলা চিরদিনই প্রীতির পুত্তলী, এবং অবলা চিরদিনই কোমল হৃদয়ের কোমলতর গুণে আরাধ্যা দেবী। কিন্তু, বিজাতীয়ভাবমূলকশিক্ষায়, আমাদের অবলাগণের কোমলতার গুণ সকল অন্তর্হিত হইতেছে; তৎপরিবর্ত্তে পুরুষোচিত কঠোর গুণ সকলই স্থান পরিগ্রহ করিতেছে। তাঁহাদের নামগুলি পর্য্যন্ত বিকৃত হইয়া বিজাতীয় ভাবের প্রাধান্যঘোষণা করিতেছে। এখন কুমুদিনী কারফরমা, বিনোদিনী বটব্যাল, ভবসুন্দরী ভট্টাচার্য্য, রত্নমণি রায়, গঙ্গামণি গঙ্গোপাধ্যায়, আমাদের সম্মুখে নিরন্তর বিভীষিকাময়ী ছায়াবিস্তার করিতেছেন। কোমলতাময়ী কামিনীগণের কমনীয় নামগুলির এইরূপ দুর্দ্দশা দেখিলে কাহার হৃদয়ে বেদনা বোধ না হয়? এইরূপ নামে স্ত্রী, কি পুরুষ, অনেক সময়ে তাহারই নিরূপণ করা দুঃসাধ্য হইয়া উঠে। স্ত্রীশিক্ষার এইরূপ শোচনীয় পরিণাম,—জাতীয়ভাবের এইরূপ শোচনীয় অধঃপতন, আমাদের দেশে কখনও ঘটে নাই। যে, অবলা জাতীয়ভাবে পরিচালিত ও জাতীয় শিক্ষার অনুবর্ত্তিনী হয়েন, তিনি ভূলোকে থাকিয়াও স্বর্গস্থিতা দেবী বলিয়া পূজিতা হইয়া থাকেন,