পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ১৭ ]

ইঙ্গরেজী শিক্ষা প্রবর্ত্তিত হয় নাই, আমাদের সমাজে ইঙ্গরেজী সভ্যতা গতি প্রসারিত করে নাই, আমাদের অস্থিতে অস্থিতে, মজ্জায় মজ্জায়, ইঙ্গরেজের রীতি নীতি প্রবিষ্ট হয় নাই, তখনও আমাদের দেশে বাল্যবিবাহ প্রচলিত ছিল। বাল্যবিবাহের প্রতি এখন যে দোষের আরোপ করা হইতেছে, তখন সে দোষের ফল প্রত্যক্ষীভূত হয় নাই। ষোড়শ শতাব্দীর শেষভাগে, যখন প্রতাপান্বিত মোগল সম্রাট আকবর শাহ, ভারতের উত্তরে ও দক্ষিণে, পূর্ব্বে ও পশ্চিমে বিজয়িনী শক্তি,বদ্ধমূল করিতেছিলেন, “দিল্লীশ্বরো বা জগদীশ্বরো বা” ধ্বনি যখন শতসহস্র কণ্ঠ হইতে উচ্চারিত হইতেছিল, দুই এক দল ইউরোপীয় বণিক যখন ভারতের এক প্রান্তে, সামান্য বিপণীর মধ্যে, ক্ষতিলাভের গণনা করিতেছিল, ভারতবর্ষ যখন হিন্দুর মন্ত্রণায় পরিচালিত ও হিন্দুর বাহুবলে রক্ষিত হইয়া স্ব-তন্ত্র শাসননীতির মহিমার পরিচয় দিতে ছিল, তখন সুদূর দক্ষিণাপথে মালজী ভোস্‌লা-নামক একজন সম্ভ্রান্ত মহারাষ্ট্রীয়ের শাহজীনামে একটি সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। শাহজীর বয়স যখন পাঁচ বৎসর, তখন একদা মালজী তাঁহাকে সঙ্গে লইয়া, দোলের উৎসবে যদুরাওনামক একজন মহারাষ্ট্রীয়প্রধানের ভবনে গমন করেন। যদুরাওর জিজিবাই নামে একটি তিন বৎসরের দুহিতা ছিল। বালিকা প্রফুল্লচিত্তে পঞ্চবর্ষীয় শাহজীর সহিত আবির খেলিতে প্রবৃত্ত হয়। এই সূত্রে, উভয়ের পিতা, উভয়ের মধ্যে পরিণয়সম্বন্ধ স্থির করেন। চারি বৎসর পরে, অর্থাৎ দশমবর্ষীয় শাহজীর সহিত, অষ্টমবর্ষীয়া জিজিবাইর বিবাহ হয়। এই বিবাহে সে সন্তান জন্মগ্রহণ করে, তাহার বীরত্বে ও তাহার পরাক্রমে, দুর্জ্জয় মোগল সাম্রাজ্যও বিচলিত হয়। ভারতের অদ্বিতীয় সম্রাট আরঙ্গজেবও তাহার লোকাতীত ক্ষমতার নিকট মস্তক অবনত করেন। বাল্যবিবাহের ফল,—প্রাতঃস্মরণীয় শিবজী, হিন্দুজয়ী