পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ২২ ]

শাসনে বাস করিয়া, ইঙ্গরেজের সংস্পর্শে থাকিয়া, যদি ইঙ্গরেজের আত্মনির্ভরের ভাব শিখিতে না পারি, তাহা হইলে আমাদের জীবনধারণ বিড়ম্বনা মাত্র। আমরা যদি ক্রীতদাসের ন্যায়, নিরবচ্ছিন্ন অনুকরণেই ব্যাপৃত থাকি, জাতীয় ভাবে জলাঞ্জলি দিয়া, যদি নিউজিলণ্ডবাসী বা জুলুদিগের ন্যায় সর্ব্বাংশে সাহেবীভাবসংগ্রহ করি, এবং যদি নিয়ত পরমুখপ্রেক্ষী হইয়া দুর্ব্বহ দেহভার বহন করিতে থাকি, তাহা হইলে, আজই হিমালয়ের শৃঙ্গপাতে স্বদেশ বিচূর্ণ বা ভারত মহাসাগরের অতলজলে স্বদেশ নিমগ্ন হউক। পৃথিবীর মানচিত্র হইতে স্বদেশের চিহ্ন পর্য্যন্ত বিলুপ্ত হইয়া যাউক, তাহাতে কিছুমাত্র ক্ষতি নাই।

 কিন্তু আমার আশা আছে যে, আমাদের দেশ পুনর্ব্বার জাতীয় ভাবে বলীয়ান্ হইবে। আমরা সকলেই কিছু হীন অনুকরণপ্রিয় ক্রীতদাসে পরিণত হই নাই। আমাদের ঘোরতর দুর্দ্দশা ঘটিয়াছে; বহুবার, বহুজাতি আসিয়া আমাদিগকে নিপীড়িত, নির্জ্জিত ও নিগৃহীত করিয়াছে। তথাপি আমরা সর্ব্বাংশে পরের সহিত মিশিয়া যাই নাই। আমরা বহুকাল হইতে রাজনীতি বিষয়ে স্বাধীনতা হারাইয়াছি। ধর্ম্মসম্বন্ধে আমাদের যে স্বাধীনতা ছিল, বর্ত্তমান সহবাসসম্মতির আইনে তাহাও হৃত হইবার উপক্রম হইয়াছে। এখন আচার ব্যবহারের সম্বন্ধে যে স্বাধীনতাটুকু আছে, আমরা তাহাও কি হারাইতে বসিব? না, তাহা কখনও হইবে না। জীবন থাকিতে আমরা এরূপ অধঃপতনের চরমসীমায় উপনীত হইব না।

 মায়াবাদী উদাসীন পুরুষ, নিত্যসন্তোষ ও নিত্য তৃপ্তিতে বিভোর হইয়া বলিতে পারেন, নিয়তির বিচিত্র লীলায় ভারতের অদৃষ্টচক্র পরিবর্ত্তিত হইয়াছে। ভারতবর্ষ বিভিন্ন জাতির আবাসভূমি। ইহাদের ভাষা বিভিন্ন, পরিচ্ছদ বিভিন্ন, ধর্ম্মপ্রণালী বিভিন্ন। ইহা ব্যতীত,