পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ২৩ ]

দুরারোহ পর্ব্বত, দুর্গম অরণ্য, দুস্তর তরঙ্গিণী প্রভৃতিতে ভারতের জনপদ সকল পরস্পর পৃথক্‌ভাবে অবস্থিত। ইহাতে ভারতবর্ষের জাতীয় ভাবে একীভূত হইবার সম্ভাবনা নাই। বিধাতা, ভারতের অদৃষ্টলিপিতে যাহার বিধান করিয়াছেন, ভারতবর্ষকে তদনুসারেই চলিতে হইবে। যাঁহারা কর্ম্মশীলতায় জলাঞ্জলি দিয়া বৈরাগ্যের আশ্রয় গ্রহণ করিয়াছেন, এ কথা তাঁহাদের মুখেই শোভা পায়। পৃথিবীর অপরাপর দেশে যখন এরূপ অন্তরায়েও জাতীয় ভাবে একীভূত হইয়ছে, তখন ভারতবর্ষ না হইবে কেন? ইতালির সহিত ভারতবর্ষের অনেক বিষয়ে সাদৃশ্য আছে। এশিয়ার মানচিত্রে যেমন ভারতবর্ষ, ইউরোপের মানচিত্র তেমনি ইতালি। উভয়ই, উভয় মহাদেশের দক্ষিণপ্রান্তবর্ত্তী একটি প্রশস্ত উপদ্বীপ। উভয়ের দক্ষিণ ভাগই সাগরের দিকে যাইয়া শেষ হইয়াছে। উভয়ের শীর্ষদেশেই অটল অচলবর, বিরাট পুরুষের ন্যায় অধিষ্ঠিত থাকিয়া, প্রকৃতির অনুপম শোভা বিকাশ করিয়া দিতেছে। উভয়ের অন্তর্দ্দেশেই প্রসন্নসলিলা তরঙ্গিণী, তরঙ্গরঙ্গ বিস্তার করিয়া বহিয়া যাইতেছে। উভয়ই প্রকৃতিরাজ্যের রমণীয় স্থান। শ্যামল তরুলতায়, শস্যপূর্ণ, প্রশস্ত ক্ষেত্রে উভয়ই চিরশোভিত। অযত্নসম্ভূত সৌন্দর্য্যের গরিমায়, অনায়াসলভ্য ফলসম্পত্তির মহিমায়, উভয়ই বিভূষিত। পক্ষান্তরে, ভারতবর্ষের ন্যায় ইতালিও অনেকগুলি খণ্ডরাজ্যে বিভক্ত। বহুশতাব্দী পর্য্যন্ত উভয় দেশই বিভিন্ন বিদেশী আক্রমণকারীর পরাক্রমে নিপীড়িত, নির্জ্জিত ও স্বাধীনতায় বঞ্চিত। উভয় দেশই বিভিন্ন ভাষার জনগণে অধ্যুষিত। ভারতবাসীর ন্যায়, ইতালিবাসীও তাহাদের পূর্ব্বতন গৌরব হইতে বিচ্যুত হইয়াছিল। তাহারা সীজরের বীরত্বকীর্ত্তিতে গৌরবান্বিত হইত না, ব্রুতসের হিতৈষিতায় আত্মাভিমানপ্রকাশ করিত না এবং সিসিরোর বাগ্মিতায় পূর্ব্বমহত্ত্বের ছবি স্মৃতিপটে