পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[ ২৪ ]

অঙ্কিত করিতে প্রয়াস পাইত না। এতদ্ব্যতীত, ইতালির এক জনপদের ভাষা, আর এক জনপদবাসী বুঝিতে পারিত না, তাহারা এক পূর্ব্বপুরুষ হইতে উৎপন্ন, এক ভ্রাতৃভাবে সম্বন্ধ ও একবিধ গৌরবে গৌরবান্বিত হইলেও, পরস্পরকে পৃথকভাবাপন্ন বিদেশী ভাবিত। তথাপি ইতালির এক প্রান্ত হইতে আর এক প্রান্তে সমবেদনা সঞ্চারিত হয়, ইতালি অপূর্ব্ব জাতীয়ভাবে একীভূত হইয় উঠে। এইরূপ সুইজর্লণ্ড ও বেলজিয়মও বিভিন্ন ধর্ম্মপ্রণালীর ও বিভিন্ন ভাষার লোকের আবাসস্থান হইলেও, প্রত্যেক দেশই একতায় সম্বন্ধ। ভারতবর্ষে নানা বিষয়ে বৈষম্য থাকিলেও, এই বৈষম্যের অভ্যন্তরে সাম্যের বীজ নিহিত রহিয়াছে। বাঙ্গালী, হিন্দুস্থানী, পঞ্জাবী, রাজপুত, মহারাষ্ট্রীয়, সকলেই এক হিন্দুবংশসম্ভূত। হিন্দুনাম উচ্চারণ করিলে, সকলের হৃদয়েই একটি অপূর্ব্ব ভাবের উদয় হয়। রামচন্দ্রের চিত্তবিমোহিনী কথায় সকলেই বিমোহিত হয়েন, ভীষ্মের উদার চরিত্রে সকলের হৃদয়ই ভক্তিশ্রদ্ধায় আনত হয়, সীতা ও সাবিত্রীকে সকলেই পবিত্রতাময়ী মহাদেবী বলিয়া সম্মানিত করেন। প্রতাপসিংহ ও শিবাজী, গুরু গোবিন্দ সিংহ ও রণজিৎ সিংহকে, সকলেই স্বজাতির ও স্বদেশের গৌরবকর বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়া থাকেন। শাক্যসিংহ ও শঙ্করাচার্য্য, চৈতন্য ও নানক, সকলের হৃদয়েই পবিত্র প্রেমস্রোত প্রবাহিত করেন। হিন্দুনাম, হিন্দুকীর্ত্তি, বাঙ্গালী, হিন্দুস্থানী, সকলেরই সাধারণ সম্পত্তি। এই সাধারণ সম্পত্তির মহিমায়, সকলেই সকলকে ভ্রাতৃভাবে আলিঙ্গন করিবে। এতদ্ব্যতীত, এক রাজার অধীন ও এক রাজকীয় বিধিতে পরিচালিত হওয়াতে, সকলেই একবিধ স্বার্থে দৃঢ়সম্বন্ধ হইয়া উঠিবে। বাঙ্গালী, জাতীয় আচারব্যবহার, জাতীয় রীতিনীতির মর্য্যাদারক্ষা করুন, হিন্দুস্থানী প্রভৃতি জাতীয় ভাবে পরিচালিত হউন। শেষে সকলে, একবিধ স্বার্থে,—একবিধ স্বদেশ-