পাতা:আমাদের জাতীয়ভাব - রজনীকান্ত গুপ্ত.pdf/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

[  ]

পাঠান ভূপতি সমাসীন হইয়াছেন। ক্রমে মোগল ভূপতির আক্রমণে পাঠান রাজত্বের বিলয় হইয়াছে; ভারতে মোগলসাম্রাজ্যের অভ্যুদয় দেখা গিয়াছে। আবার কালের পরিবর্ত্তনে মোগলসাম্রাজ্যেরও বিলয় ঘটিয়াছে। এইরূপে খ্রীষ্টের ৫০০ বৎসর পূর্ব্ব হইতে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্য্যস্ত, ভারতবর্ষে এক আক্রমণকারীর পর আর এক আক্রমণকারী উপনীত হইয়াছেন, এক রাজবংশের পর আর এক রাজবংশের আবির্ভাব হইয়াছে এবং এক শাসনবিধির পরিবর্ত্তে আর এক শাসনবিধির বিকাশ দেখা গিয়াছে। ভারতবর্ষীয়গণ দুই হাজার বৎসরেও অধিককাল বিভিন্ন আক্রমণকারীর অত্যাচার সহিয়াছে, বিভিন্ন রাজবিধি অনুসারে পরিচালিত হইয়াছে এবং বিভিন্ন আচার ব্যবহার, বিভিন্ন সভ্যতার আবির্ভাব ও তিরোভাব দেখিয়াছে।

 এইরূপ উপর্য্যুপরি আক্রমণে ভারতবর্ষের ধনরত্ন বিলুণ্ঠিত হইয়াছে বটে, কিন্তু ভারতবর্ষ আত্মগৌরবে জলাঞ্জলি দেয় নাই। যখন পারস্যের অধিপতি দরায়ুস হিস্তাম্পিস্ ভারতবর্ষ আক্রমণ করেন, তখন মহামতি শাক্যসিংহের অমৃতময়ী তত্ত্বকথায় ভারতবর্ষ সঞ্জীবিত হইতেছিল, এবং ভারতের ধর্ম্মজ্ঞান, ভারতের সভ্যতা, সমগ্র পৃথিবীতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হইয়া উঠিয়াছিল। যখন সেকন্দর শাহ সপ্তসিন্ধুর প্রসন্নসলিলবিধৌত পবিত্রভূমিতে সমাগত হয়েন, তখন তৎসহচারী গ্রীকগণ, ভারতবর্ষীয়দিগের সরলতা, সত্যনিষ্ঠা, সদাচার ও জাতীয় গৌরবের অপূর্ব্ব বিকাশ দেখিয়া, অতিমাত্র বিস্ময়ে তাঁহাদের গুণগান করিয়াছিলেন। যখন সুলতান মহমূদ বারংবার ভারতের সম্পত্তিবিলুণ্ঠনে উদ্যত হয়েন, তখনও হিন্দুর আচারব্যবহার, হিন্দুর সভ্যতা অটল ছিল। মহম্মদ গোরীর আক্রমণের পর, যখন দিল্লীতে পাঠান রাজত্বের প্রতিষ্ঠা হয় তখনও ভারতভুমি আপনার সাহিত্য ও আপনার রীতিনীতির সম্মানরক্ষা করিতেছিল। পাঠানরাজত্বেই বঙ্গের গৌরব