পাতা:আমার জীবন.djvu/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ छ ] সেকেলে রমণী সমাজের সম্পূর্ণ বস্ত ছিলেন। কে কি বলিবে, এই ভয় তাহাব চিত্তে যেরূপ প্রবল ছিল, এই স্বেচ্ছাতন্ত্রযুগে তাহার একটা পরিমাণ করা যায় না। শুধু কে কি বলিবে তাহা নহে, কে তাহার মুখখানি দেখিয়া ফেলিবে—নিকের জিহবা নাচিয়া উঠিবে, এই লজ্জায় তিনি অবগুণ্ঠণবতী হইয়া যেভাবে লুকাইয়া থাকিতেল তাঁহা এখন কল্পনা করা সহজ নহে । তিনি লেখাপড়ার চর্চা করেন, এ কথা শুনিলে গুরুজনেব গণ্ড লজ্জায় রক্তিমাভ হইয়া উঠিত, ক্ষুধিত হইলে তিনি চাহিয়া পাইতে পারিতেন না—বধুবেশী হিন্দু রমণী সহিষ্ণুতা ও ত্যাগশীলতার একখানি মৌন ছবিবিশেষ ছিলেন। এই প্রকার অবস্থা সমূহ অতিক্রম করিয়া বাধক্যে উপনীত একজন হিন্দুরমণী কি ভাবে চিস্ত করিয়াছেন, তাহার ধর্মভাব কি প্রকার, তাহার মন কি ছন্দে গড়া—ইহা জানিতে স্বভাবতই কৌতুহল জন্মিবার কথা, এই কৌতুহল রাসমুন্দরী অপর্যাপ্তরূপে চরিতার্থ করিয়াছেন । এখন আমরা তাহার জীবনের কিছু আভাস দিতে চেষ্টা কবিল। অমরকোষে রমণীর আর একটি প্রতিশব্দ ‘ভীরু’। এই নাম কিরূপ সার্থক, তাহণ রাসমৃদবীর জীবনে স্বম্পষ্টরূপে দৃষ্ট হইতেছে। বাল্যকালে ভয় তাহাকে একবারে অভিভূত করিয়া রাখিয়াছিল । বালিকা শুনিয়াছিল, যদি কেহ কাহাকে মারে তবে তাহাকে ছেলেধরায় লইয়া যায় । এই ছেলেধরার ভয়ে রাসমুন্দরী দিনরাত অস্থিব থাকিতেন । “আমাকে যখন কোন ছেলে মারিত, তখন ভয়ে আমি বড় করিয়া কঁাদিতাম না, উহাকে ছেলেধরায় লইয়া যাইবে, কেবল এই ভয়ে আমার দুই চক্ষু দিয়া জল পড়িত।” অনেক সময় ছেলেধরার কথা মনে হওয়ামাত্র তাহার দুইচক্ষু জলপূর্ণ হইত, এই অবস্থায় এক সঙ্গিনী একদিন আসিয়া বলিল, “উনি একটি সোহাগের আরশি, কিছু না বলিতেই কাদিয়া উঠেন, এই বলিয়া আমার মুখে একটা ঠোকৃনা মারিল ।” একদিন একজন গো-বৈদ্য দেখিয়া ছেলেধরা ভাবিয়া “ভয়ে এককালে মৃতপ্রায় হইলাম, তখন আমার মনে এত ভয় হইয়াছিল যে, আমি দুই হাত দিয়া চক্ষু ঢাকিয়! থর থর করিয়া কঁাপিতে লাগিলাম।” শুধু ছেলেধরার ভয় নহে, একদিন দুইটি ছোট ভাই সহ নদীর ঘাটে যাওয়ার পরে একটি ভাই বলিল—“দেখিতেছি শ্মশান, মড়ার বিছানা পড়িয়া আছে। ঐ মড়ার নাম শুনামাত্র আমার অত্যন্ত ভয় হইল ; সে ভয় যেন হা করিয়া আমাকে গ্রাস করিতে আসিল ।” প্রৌঢ় বয়সের প্রসঙ্গে রাসমুন্দরী ভগবানকে ধন্যবাদ দিয়া লিখিয়াছেন—আমার মন সর্বদা ভয়ে কম্পিত হইত, সে ভয় আমার মনে কে দিয়াছিল, আবার কাহার বল অবলম্বন করিয়াই বা সে ভয় পরাস্ত হইল ? কেহ মারিলে বালিকা ভল্পে কিছুই বলিত না, "সকলে জনিত, আমাকে মারিলে