পাতা:আমার বাল্যকথা ও আমার বোম্বাই প্রবাস.pdf/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* १२ আমার বোম্বাই প্রবাস নিরীশ্বরবাদের পক্ষ হইয়া অনেক সময় তর্ক করিতেন—তাহার কথার ভাবে বোধ হইত. যে জৈনের হীনযান বৌদ্ধদের মত নিরীশ্বরবাদী—জগং অনাদিকাল হইতে আপনাপনি চলিয়া আসিতেছে, তাহার কোন স্বষ্টিকর্ত্ত তাহার স্বীকার করে না। কিন্তু জৈনদের দার্শনিক মতের ঠিক নাই। তাহার বলে, কোন বিষয়, ই, ন, দুইই হইতে পারে ; যেমন জগৎ নিত্য ও অনিত্য, প্রসঙ্গ ও সময় অনুসারে দুইই বলা যাইতে পারে। এরূপ যুক্তি অবলম্বন করিলে কোন তথ্যের মীমাংসা হয় না। তাহদের এই দ্বৈধ ভাবের প্রতি কটাক্ষ করিয়৷ সর্ব্বদর্শন সংগ্রহকার তাহাদিগকে “স্তাদ-বাদী’ অর্থাৎ বিকল্পবাদী বলিয়া উপহাস করিয়াছেন। জৈনদের দার্শনিক তত্ত্ব যাহাই হউক, মানুষের স্বাভাবিক আরাধনা প্রবৃত্তি কোথায় যাইবে ? দেখা যায় যে ঈশ্বরারাধনার পরিবর্তে তাহাদের ধর্ম্মে বীরপূজা স্থান পাইয়াছে। তাহদের আদিগুরু যে মহাবীর, তিনিই তাহাদের দেবত হইয়া দাড়াইয়াছেন । জৈনধর্ম্মে বোধ হয় যেন হিন্দু ও বৌদ্ধধর্ম্ম মিশ্রিত, বৌদ্ধধর্ম্মের জ্ঞানকাণ্ড ও হিন্দুধর্ম্মের পৌরাণিক ভাগ উহার মতে অনুস্থ্যত । জৈন মন্দিরে ব্রাহ্মণ পুরোহিত গিয়া পূজাৰ্চনা করে, এমনও দেখা যায়। বৌদ্ধ ও জৈনধর্ম্ম, উভয় ধর্ম্মই কর্ম্মফলের নৈতিক প্রাধান্ত মানিয়া লয়। আপন আপন কর্ম্ম অনুসারে জীবের যোনি ভ্রমণে উভয়েরই বিশ্বাস। যে সকল সাধু পুরুষ স্বীয় কর্ম্মগুণে জিতেন্দ্রিয় হইয়া নিবৃতি লাভ করিয়াছেন তাহারাই জিন, জিনের অনুচর জৈন। জিনের অপর নাম তীর্থঙ্কর। যুগে যুগে এইরূপ ২৪ জন তীর্থঙ্কর উদয় হইয়াছেন এবং ভবিষ্যৎ যুগে আরো ২৪ জন উদয় হইবেন। জৈন মন্দিরে এই সকল তীর্থঙ্করের পাষাণ মূর্ত্তি স্থাপিত। ইহাদের মধ্যে ত্রয়োবিংশ ও চতুর্ব্বিংশ জিনদ্বয়, পরেশনাথ ও মহাবীর, জৈনদের বিশেষ পূজাৰ্ছ দেবতা। এই সকল তীর্থঙ্কর-উদ্দেশে পরেশনাথের পাহাড়, গিরনার, শত্রুঞ্জয়, আবুর পাহাড় প্রভৃতি নানা স্থানে সুন্দর সুন্দর জৈন মন্দির প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ‘অহিংস পরমে ধর্ম্মঃ ইহা বৌদ্ধ ও জৈন উভয়েরই উপদিষ্ট ধর্ম্ম কিন্তু ইহার মধ্যে একটু বৈশিষ্ট্য আছে। বৌদ্ধধর্ম্ম অনাত্মবাদী, তাহার বিপরীত আত্মবাদ জৈনধর্ম্মের সারতত্ত্ব । জৈনদের বিশ্বাস যে, জীবজন্তু, এমন কি বৃক্ষলত উদ্ভিদ কোন কোন জড় পদার্থও আত্মসত্তায় পূর্ণ, এই হেতু অহিংসা ধর্ম্ম তাহদের বিশিষ্ট্ররূপ পালনীয়। পশু পক্ষীদের আহার যোগানে জৈন গৃহস্থের নিত্য নিয়মিত কর্ম্ম । জৈনদের উদ্যোগে বোম্বাই, কলিকাতা, ও অন্তান্ত স্থানে পগুর হাসপাতাল (পিঞ্জর পোল ) স্থাপিত হইয়াছে। উচ্চাঙ্গের জৈন সাধক আপনার শরীরের রক্ত দিয়া মশা ছারপোকা পোষণ করিয়৷ পুণ্যসঞ্চয় করেন। পাছে দীপালোকে কীটপতঙ্গের প্রাণহানি হয়, এই আশঙ্কায়